28 April 2018

ফেসবুকে পর্নোগ্রাফি দেখাই যাদের চাকরি

প্রতিকি ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সম্প্রতি তাদের কনটেন্ট মডারেশনের নীতিমালা প্রকাশ করার পর তাদের যে কর্মীরা এসব ম্যাটারিয়াল রিভিউয়ের কঠিন কাজটা করে থাকেন, তাদের ভূমিকা সামনে এসেছে

সারাহ কাট্জ নামে ফেসবুকের এমনই এক সাবেক কর্মী বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে পাওয়া যায় এমন সব ধরনের কদর্যতম জিনিস তাকে এই চাকরিতে রোজ দেখতে হতো; যার বেশির ভাগই পর্নোগ্রাফি- আর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল তার ব্যক্তিগত জীবনে

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, তারা তাদের মডারেটরদের মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য দিতে সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা রেখেছেআসলে ফেসবুকে কাজ করেন এমন বেশ কিছু কর্মী, রোজ যারা ইন্টারনেটের কুৎসিততম জিনিসগুলো দেখেন- যাতে আমার আপনার মতো সাধারণ লোকের সেগুলো দেখতে না-হয়

ফেসবুকে কিছু আপত্তিকর চোখে পড়লে আপনি যদি সেটা রিপোর্ট করেন- তাহলে সেই অনুরোধ চলে আসে বার্লিনে ফেসবুকের এক লুকানো অফিসে

আর সেখানে বসেই তাদের কনটেন্ট রিভিউয়াররা প্রতিদিন হাজার হাজার ছবি আর ভিডিও দেখে যাচাই করেন, সেগুলো ফেসবুকে রাখার উপযুক্ত কি-না! কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে

ওই অফিসে কাজ করতেন, এমন এক কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, আমাকে রোজ কাঁদতে হতোফেসবুকে বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটাআর সবচেয়ে খারাপও, কিন্তু কারও যেন সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই

রোজ অসম্ভব সব খারাপ ও যন্ত্রণাদায়ক জিনিস দেখতে হতো... মাথা কেটে ফেলা, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, পশুদের ওপর নির্যাতন এসবএকটা যেন যন্ত্রের মতো হয়ে গিয়েছিলাম- ওগুলো দেখে আঙুলের একটা ক্লিকে ঠিক করতে হতো জিনিসটা থাকবে কি থাকবে না কিন্তু ফেসবুকে ওই কাজ করতে গিয়ে তাকে সবচেয়ে খারাপ জিনিস কী দেখতে হয়েছিল? সারা কাটজের বলতে দ্বিধা নেই, ‘চাইল্ড পর্নোগ্রাফিটাই সবচেয়ে খারাপকারণ ছয় মাসের শিশুকে ধর্ষণ করার দৃশ্যও দেখতে হয়েছেএছাড়া সন্ত্রাসবাদও আছে... জঙ্গি হামলা ও নৃশংসতার বহু রক্তাক্ত ঘটনাও দেখতে হয়েছে

যে ফেসবুক কর্মীদের এই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তাদের জন্য কর্তৃপক্ষ কী করছেন? ফেসবুক প্রোডাক্ট পলিসির প্রধান মনিকা বিকার্টের কাছে এই প্রশ্নই রেখেছিল বিবিসি

তিনি জানান, ‘কাজটা কঠিন কোনো সন্দেহ নেইতবে আমি বলব রিভিউয়াররা যে ধরনের জিনিসপত্র দেখেন, এই ধরনের গ্রাফিক কনটেন্ট তার খুবই সামান্য একটা অংশআর ক্রমশ আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছি, যাতে কেউ ফেসবুকে এই ধরনের জিনিস আপলোড করলে তা যাতে নিজে থেকেই রিভিউ করে সরিয়ে দেওয়া যায় সারা কাটজ অবশ্য বলেন, এই কনটেন্ট রিভিউয়ের কাজ তার মানসিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার ওপর সাঙ্ঘাতিক প্রভাব ফেলেছিলতার কথায়, বেশ কয়েকবার আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছিএকবার তো দেখেছিলাম একটা উঁচু বিল্ডিং থেকে কেন জানি না লোকজন লাফিয়ে পড়ছে, আর তাদের বাঁচানোর বদলে লোকজন ছবি তুলছে, ভিডিও করছে

আমি একটা বাচ্চা মেয়েকে ধরে ফেললাম, কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙে গেলো ... চারদিকে রক্ত, তবু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না- শুধু ভিডিও তুলে যাচ্ছে! এমনকি, তিনি বলছেন এই গভীর মানসিক সঙ্কটের সময় ফেসবুকও তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনিকোম্পানি আমাদের কোনো সাহায্যই করেনিআমরা প্রায় রোজ অভিযোগ জানাতামপ্রায় রোজই, কারণ আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছিলআমাদের যে জিনিসগুলো দেখতে হতো সেগুলো আর নেয়া যাচ্ছিল না

ফেসবুক অবশ্য দাবি করছে এই কর্মীদের সাহায্য করা হয় না, সেই অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়মনিকা বিকার্ট বলেন, কাজটা কঠিন ঠিকইকিন্তু সেটা ঠিকমতো করার জন্য যা দরকার কর্মীদের সেটা দিতেও কিন্তু আমরা দায়বদ্ধ


শেয়ার করুন

0 facebook: