13 June 2018

মনু ও ধলাই নদে বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদে স্থানে স্থানে বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেডুবে গেছে ফসলি জমিএর মধ্যে মনু নদের তিনটি স্থানে ও ধলাই নদের পাঁচটি স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছেদুটো নদে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছেমনু নদের বাঁধ ভেঙে সড়ক ডুবে যাওয়ায় বাংলাদেশ-ভারত সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদের তিনটি স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১২ গ্রামের মানুষগভীর রাতে বাঁধ ভেঙে দ্রুতগতিতে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে গ্রামে ও ফসলি জমিতেএ ছাড়া মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ধলাই নদের করিমপুর, লক্ষ্মীপুর, বাদে করিমপুর, সোনানন্দপুর এবং আদমপুর ইউনিয়নের জামিরকোনা নামক স্থানে বাঁধ ভেঙে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মনু নদে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধলাই নদে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, মনু নদে আকস্মিকভাবে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় শরীফপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেশরীফপুরের বটতলা থেকে চানপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক তিন ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে

গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে গতকাল দুপুর থেকে মনু নদে পানি বৃদ্ধি পায়বিকেলে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সংলগ্ন চাতলা সেতু এলাকায় পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়

শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী জানান, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে আমলা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পসংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা মিলে শতাধিক বস্তা বালু দিয়ে এ স্থান রক্ষা করেনতবে রাত আড়াইটায় বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দ্রুতগতিতে ঢলের পানি গ্রামে ঢোকেএ পানিতে বসতঘরসহ ফসলি জমি তলিয়ে যায়ফলে বাঘজুর, তেলিবিল, চানপুর, খাম্বারঘাট, শরীফপুর, বটতলা, সঞ্জরপুর গ্রামের দুই হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে ইউপির চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ অবস্থায় পানিবন্দী লোকজন যথাযথভাবে পবিত্র শবে কদরের রাতে ইবাদত করতে পারেনিএমনকি তারা ঈদুল ফিতরও উদ্‌যাপন করতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে

একই সময় চাতলা সেতুর উত্তর দিকে কয়েক মাস আগে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে গ্রামে ঢোকেএ কারণে নছিরগঞ্জ, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর গ্রামের এক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে

ঢলের পানিতে শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের বটতলা থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক তিন ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হলে গতকাল রাত থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেনপ্রথম আলোকে তিনি বলেন, মনুর চাতলা সেতু এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলএ অবস্থার আরও অবনতি হতে পারেমনু নদের বাঁধের প্রায় সমান সমান হয়ে গেছে পানিবাঁধটি এখন ঝুঁকিপূর্ণপানি আরও বাড়লে বাঁধ উপচে আরও বেশিসংখ্যক লোকালয়ে পানি ঢুকবে

এদিকে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছেদেশের ভেতরে বৃষ্টি এবং ত্রিপুরায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে মূলত পাহাড়ি কিছু নদীর পানি বেড়েছেযেসব নদীর পানি বাড়ছে, সেগুলো আকারে ছোটএগুলোর ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় প্রবাহ বেড়ে গেছে


আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আমাদের বড় নদীগুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ আছেসেগুলো নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই


শেয়ার করুন

0 facebook: