08 October 2018

এমপিও’র নির্দেশনা জারির আগেই বেতন পাচ্ছেন ৬৬ শিক্ষক


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও)-এর নির্দেশনা জারি হওয়ার আগে থেকেই ‘কম্পিউটার শিক্ষা’ বিষয়ের ৬৬ জন শিক্ষক নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে  দেশের ৬৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই শিক্ষকদের এমপিও চালু রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘কম্পিউটার শিক্ষা’ বিষয়টি প্যাটার্নভুক্ত করে সরকার। পাশাপাশি শিক্ষানীতি অনুযায়ী ‘কম্পিউটার শিক্ষা’ বিষয়টি ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ নামে সংশোধন করে তা বাধ্যতামূলক করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হলেও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এমপিও দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আর এ সময়ের মধ্যে নতুনভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোনও বিষয়ের বিপরীতে এমপিও দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর পরিপত্র জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য এমপিও দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করার পর এই বিষয়টিসহ কয়েকটি বিষয়ের বিপরীতে এবছরই এমপিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১২ জুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করে সরকার। ওই নীতিমালায় নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে বিধি মোতাবেক নিয়োগ করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষককের এমপিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী গত ১ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষকদের এমপিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখনও এমপিও সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা জারি হয়নি।

কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের ৬৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬৬ জন শিক্ষককের মধ্যে কেউ এক বছর, কেউ দুই বছর আবার কেউবা ১০ বছর ধরেই বেতন পাচ্ছেন। সরকারিভাবে বেতন বন্ধের ঘোষণা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতনভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু কিভাবে হয়েছেন তা কেউ জানাতে পারছেন না।
 মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. সবুজ আলম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা জারির আগে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষক বেতন-ভাতা পেতে পারেন না। যারা পেয়েছেন তারা নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিভাবে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে  ৬৬ জন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন আমার বোধগম্য নয়। কেউ কেউ  ৮-১০ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন। এই শিক্ষকদের যারা এমপিও দিয়েছেন তারা এবং যারা এমপিও দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, এই শিক্ষকদেরকে হয়তো অন্য কোনও বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে আগেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। হয়তো তারা এমপিওভুক্তও ছিলেন। এখন নিয়োগ জালিয়াতি করে বিষয় বদলে ফেলা হয়েছে এমপিও তালিকায়। 

মাউশির সূত্রে জানা গেছে, মাগুরার কাসুন্দি জুনিয়র হাই স্কুলের ২০১৭ সালের এমপিও তালিকায় নাম ছিল না মায়া চৌধুরীর। কিন্তু ২০১৮ সালের এমপিও তালিকায় কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে তার নাম রয়েছে। এই শিক্ষকের ইনডেক্স নম্বর ১১৪০১৬৭।

একইভাবে মির্জাকান্দির আড়ুয়াকান্দি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মো. নাসিরুদ্দিন আহমেদ এমপিওভুক্ত হন ২০১৮ সালে। ২০১৭ সালে এমপিও তালিকায় তার নাম ছিল না। এই শিক্ষকের ইনডেক্স নম্বর ১১৩৯৫৬৯।

এছাড়া, কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে ২০১৮ সালে এমপিওভুক্ত হয়েছেন— কুশারিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম (ইনডেক্স নম্বর ১১২৯২০২) এবং মোমরেজ গোলজান্দা পাবলিক জুনিয়র হাইস্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক হোসনে আরা ২০১৮ সালে এমপিওভুক্ত হয়েছে (নডেক্স নম্বর ১১২৭৯৫৫)। এভাবে গত প্রায় ১০ বছরে ৬৬ জন কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন,‘২০১২ সালে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে বিষয়টি প্যাটার্নভুক্ত হয়। বৈধভাবে অনেক শিক্ষকও নিয়োগ হয়েছে। তবে শিক্ষক নিয়োগ হলেও  এমপিও নীতিমালায় এই পদ না থাকায় নিম্ন মাধ্যমিকের কোনও শিক্ষকের এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ২০১৮ সালের নীতিমালায় এমপিওভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যাদের নিয়োগ ঠিক রয়েছে তারা এমপিওভুক্ত হবেন। কিন্তু আগেই বেতন-ভাতা পেয়েছে, এমনটি হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। কারা কিভাবে বেতনের সুপারিশ করেছে সেটিও যাচাই করা হবে। অনিয়ম করা হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


শেয়ার করুন

0 facebook: