28 July 2019

আমেরিকার কাছে প্রিয়া সাহার সাহায্য চাওয়া কি নতুন কোন কিছুঃ নয়ন চ্যাটার্জি?

ছবিঃ বৃত্তের ভেতর সাবেক ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার
নয়ন চ্যাটার্জি।। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের কাছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য প্রিয়া সাহার সাহায্য চাওয়ায় অনেকে অবাক হতে পারেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাহায্য চাওয়া এমনকি পৃথক সংখ্যালঘু রাষ্ট্র তৈরী করতে সর্বাত্মক সহযোগীতা পার্থনা নতুন কোন বিষয় নয়। এর আগেও এমন হয়েছে। যেমন- ২০০৭ সালের ২৭শে জুলাই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর কাছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ক্যাপ্টেন (অব) শচীন কর্মকার একটি মেইল করে, যা ২০০৭ সালের ১২ই নভেম্বর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার খবরে প্রকাশিত হয়। খবরে প্রকাশিত অংশ হলোঃ-

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের আলাদা রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা চেয়ে সিআইএর কাছে চিঠি দিয়েছেন মাইনরিটি কংগ্রেস পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পাদক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার। ভারতের পূর্ব সীমানা সংলগ্ন বাংলাদেশ ভুখন্ডে ইরাকের কুর্দিস্তানের অনুরূপ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের জন্য একটি পৃথক স্বায়ত্তশাসিত সংখ্যালঘু এলাকা প্রতিষ্ঠায় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর সহায়তা চেয়েছে দলটি। সাবেক ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার গত ২৭ জুলাই ২০০৭ এ এক ই-মেইলের মাধ্যমে সিআইএ এর পরিচালকের কাছে এই সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে সেফটিক ভালভ। তাই আজ আমাদের সাহায্য করো, আগামীকাল আমরা তোমাদের সহায়তা করবো। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে নাৎসি জার্মানির পরাজয় ও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রাষ্ট্রের সৃষ্টি। গত প্রায় ৬০ বছর যাবৎ এই ইসরাইল মৌলবাদী আরব রাষ্ট্রগুলো ও গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্যের মধ্যে সাফল্যজনকভাবে একটি বাফার রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করে আসছে। যদি ইসরাইল না থাকত, তাহলে এর মধ্যেই আরবরা পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে আরেকটি ক্রুসেড বা মহাযুদ্ধ চাপিয়ে দিত।

ই-মেইল বার্তায় আরও বলা হয়, সিআইএর সামনে বাংলাদেশে এখন দুটি পথ খোলা রয়েছে। এ দুটি পথ হচ্ছে- হয় বাংলাদেশকে বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের জন্য চাপ দাও, অথবা কুর্দিস্তানের মতো পূর্ব ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সংখ্যালঘুদের জন্য একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র গঠন কর। যদি এই দল ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে রাজনৈতিক ও আর্থিক সাহায্য পায়, তাহলে তারা সহজেই এটা পালন করেতে পারবে। (দৈনিক আমার দেশ, ১২ নভেম্বর ২০০৭)

পাঠক লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, শচীন কর্মকার এ মেইলটি যখন করেন, তখন আমেরিকা পুরোদ্যমে ওয়্যার অন টেররনামক আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং তখন আমেরিকার ক্ষমতায় রিপাবালিকান বুশ। আমি আপনাদের আগেই বলেছি, বাংলাদেশের উগ্রহিন্দুরা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমেরিকান রিপাবলিকান ব্লক মেইনটেইন করে এবং কোন রিপাবলিকান সদস্য ক্ষমতায় আসলেই তারা এ ধরনের দাবী উত্থাপন করে। এমনকি ভারতে রিপাবালিকান ব্লক মেইনটেইন করা মোদি ক্ষমতায় আসার পর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রধান রানা দাশগুপ্ত ২০১৬ সালে একই ধরনের দাবী করেছিলো।

তবে অন্যবারের দাবীর তুলনায় এবারের দাবীর সময়টা ভিন্ন। এই দাবীটি এমন সময় তোলা হলো, যখন আমেরিকা মিডল ইস্টের দিকে দৃষ্টি হালকা করে এশিয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে হ্রাস করতে বঙ্গপোসাররে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে।

উল্লেখ্য আমেরিকা চায়, চীন যেন কোনভাবেই বঙ্গপোসাগর ব্যবহার না করতে পারে। এক্ষেত্রে চীন দুটি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে সংযোগ পাবে। একটি মায়ানমার, অন্যটি বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে মায়ানমারে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বা সংঘাত চলছে। তবে বাংলাদেশে এখনও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়নি। সেক্ষেত্রে আমেরিকার এখন খুব ইচ্ছা হতে পারে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ তৈরী করা। ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের উগ্রহিন্দুদের এ রকম দাবী তোলা আমেরিকার বিশেষ স্বার্থ হাসিলের অংশ বলেই প্রতীয়মান হয়।

শেখ হাসিনার উচিত, এ অঞ্চলে রিপাবলিকান ব্লকের দেশদ্রোহীদের চিহ্নিত করে শেষ করা, কারণ এখানে তার ও তার পরিবারের অস্তিত্বও জড়িত আছে। অনেকে বুদ্ধিজীবীই বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের রিপাবালিকান ব্লকের দালালদের চিহ্নিত করতে পারেনি বিধায় তাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিলো। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে দায়ী করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় ১৯৭৫ সালে আমেরিকার ক্ষমতায় ছিলো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড। আমার আশঙ্কা হয় যে যদি পিতার মতো শেখ হাসিনা যদি দেশের রিপাবালিকান ব্লকের দালালদের চিহ্নিত করতে না পারেন তাহলে আবারো আমরা একটি ৭৫ হয়তো দেখতে পাবো।


শেয়ার করুন

0 facebook: