20 August 2019

নাগরিকত্ব হারানো ভারতীয় মুসলমানদের জন্য বিশালকার জেল নির্মাণের পরিকল্পনা ভারতের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। উগ্রপন্থী ভারত সরকারের কট্টরহিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের মুখে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে চার মিলিয়নের বেশির মানুষ, যাদের বেশিরভাগ আবার মুসলমান, নাগরিকত্ব হারিয়ে বিদেশী অভিবাসী হিসেবে ঘোষিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন। এই এজেন্ডা দেশটির বহুত্ববাদী ঐহিহ্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের সংজ্ঞাকে নতুন করে নির্ধারণ করতে চাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দারিদ্রপীড়িত ও পার্বত্য এই অঞ্চলে অভিবাসী খেদাওউদ্যোগ বাস্তাবয়ন করা হচ্ছে। যেসব মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগের জন্ম ভারতেই এবং তারা বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন।

রাজ্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বিশালাকার নতুন আটক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষকে আটক করাও হয়েছে, লজ্জাজনক ব্যপার হলো এদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত মুসলমান সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। স্থানীয় এক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন যে প্রাথমিক তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া ও কারাগারে পাঠানো হতে পারে আশংকায় কয়েক ডজন মানুষ এরইমধ্যে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু এতে উগ্র হন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন দলের কোন উদ্বেগ নেই। বরং তারা রাম রাজত্ব প্রতিষ্টার জন্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যের জনগণকেও নাগরিক হিসেবে প্রমাণের জন্য বাধ্য করতে আগ্রহী। গত মে মাসে মোদির পুনর্নির্বাচন এই সুদূরপ্রসারী হিন্দু জাতীয়তাবাদী কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজটি আরো বেগবান করেছে।

ফলে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্পদায় দিনে দিনে চরম আতংকিত হয়ে পড়ছে। আসামে জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি) তৈরির কাজটি এক বছরের বেশি সময় আগে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। যা আসাম থেকে হাজার মাইলের বেশি দূরত্বে সংঘটিত মুসলমানদের জন্য আরেকটি বিপত্তির প্রায় কাছাকাছি সময়ে ঘটতে চলেছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মোদি একতরফা ভারতের মুসলিম সংখ্যাগুরু রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে একে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেন। এ কাজ করার জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মোদি সরকার কোন আলোচনাই করেনি। ওই ঘটনার পর থেকে কাশ্মীরে নির্বিচার ধরপাকড় চলছে।

সমালোচকরা বলছেন যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদি জোর করে যে দুটি জায়গায় তার বিভক্তিসৃষ্টিকারী হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বলপূর্বক বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছে, সেগুলি হলো কাশ্মীর ও আসাম। আগামীতে আরো অনেক রাজ্যের একই পরিণতি হতে পারে বলে অনেকেই অগ্রিম ধারণা করছেন।


আসামে কাজটি করা হচ্ছে কথিত বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বাছাই করার অযুহাতে। ভারতের অতি ক্ষমতাধর চরম উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদেরকে বারবার ঘুণপোকা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এছাড়াও আসামের ৩৩ মিলিয়ন অধিবাসীর ঘারে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি একটি বিপজ্জনক খেলা শুরু করছে। সে ভারতের শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে ও সামাজিক বিচ্ছেদ তৈরি করছে। মোদির রাজনৈতিক শেকড় কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনে গাঁথা। আরএসএস সবকিছুর ঊর্ধ্বে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে স্থান দেয়। তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে একাধিক মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।

এক সময়ের সরকারি কর্মকর্তা থেকে মানবাধিকার কর্মীতে পরিণত হওয়া হার্শ মান্দার বলেন, আসাম ও কাশ্মীরে যা ঘটছে তা ভারত, ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও সংবিধানের ওপর হামলা। দেশের সবাই সমান- এমন ধারণার ওপর আঘাত। মুসলমানরা এখন শত্রু। সরকারের এমন আচরণ কার্যত ভারতীয় সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।


শেয়ার করুন

0 facebook: