Going Home Campaign |
মতামত
ডেস্ক।। রোহিঙ্গাদের Going
Home Campaign ভয়টা কাদের? বাংলাদেশের
না মায়ানমারের? গত ২৫শে
আগস্ট রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে Going
Home Campaign নামক একটি সমাবেশ করে। এই সমাবেশের পর একটি
মহল প্রচার করতে থাকে, এই সমাবেশটি নাকি বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরূপ, এটা এক
ধরনের শো-ডাউন, বাংলাদেশকে
ভয় দেখানোর জন্য। আরো প্রচার করা হয়- এই শো ডাউনের মধ্যে দিয়ে রোহিঙ্গারা জানান দিলো-তারা
বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে চায়,
তারা মায়ানমারে যেতে চায় না, বাংলাদেশ যেন তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চাপ না
প্রয়োগ করে, সেই
জন্যই বাংলাদেশকে ভয় দেখাতে এই সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশটি ‘বাংলাদেশকে
ভয় দেখানোর জন্য’ এমন
চিন্তাধারা দৃঢ় করতে-সেই সমাবেশের জন্য দেশী অস্ত্র নিড়ানি সরবরাহ করা হয়, এমন খবরও
প্রচার করা হয়।
যারা
এই ধরনের অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- যদি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশীদের ভয় দেখানোর জন্য এবং
না ফেরার জন্য সমাবেশ করতো,
তবে সেই সমাবেশের নাম - Going Home Campaign দিলো কেন ?
এর বদলে
তারা ‘হুশিয়ারী
বাংলাদেশ’ বা
‘সাবধান
বাংলাদেশ’ এমন
নামও তো দিতে পারতো। কিন্তু সেটা তো তারা করলো না।
এবার
জানা দরকার রোহিঙ্গাদের Going
Home Campaign নিয়ে রোহিঙ্গাদের বক্তব্য কি? তারা কি
উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করেছে? এ বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র বক্তব্য
হচ্ছে- “আমরা
এখানে দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না,
আমরা আমাদের দেশে ফিরতে চাই, এটাই এ সমাবেশের মাধ্যমে জানান দিতে চেয়েছি।
রোহিঙ্গাদের এই বিশাল সমাবেশ শুধুই নিজেদের অস্তিত্ব মিয়ানমারকে জানান দেয়ার জন্য।
আমরা এই বুদ্ধিটা পেয়েছি,
টঙ্গীর ইজতেমা থেকে।”( https://youtu.be/NWfo9dGRuoM)
রোহিঙ্গাদের
এই সমাবেশের মূল লক্ষণীয় ছিলো সব পুরুষের মাথায় টুপি এবং নারীদের বোরকা। সবাই ইসলাম
ধর্ম নিয়ম অনুসারে এই সমাবেশ করে। রোহিঙ্গাদের এই ইসলামী সমাবেশ তাই মুসলমানদের জন্য
হুমকি নাকি উগ্র বৌদ্ধদের জন্য হুমকি এটা বিষয়টি বাংলাদেশী মুসলমানদের চিন্তা করার
দরকার ছিলো।
অনেকে
হয়ত বলবে- মুহিবুল্লাহ’র
এ বক্তব্য যে সঠিক তার প্রমাণ কোথায়?
রোহিঙ্গা
নেতা মুহিবুল্লাহ কি সব সময় এক বক্তব্য নেয়, না ভিন্ন বক্তব্য দেয়, এটা যাচাই
করলেই সত্য মিথ্যা বের হয়ে যাবে। মাস খানেক আগে এই মুহিবুল্লাহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্পের কাছে গিয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছিলো, আসুন তার বক্তব্যটা শুনি-
“মুহিবুল্লাহ বলছিলো- Hi I am rohingya from Bangladesh
refugee camp. Most of the Rohingya refugee are willing to go back home as
quickly as possible. So what is the plan to help us? (https://bit.ly/2PkS3IP)
তার মানে
মুহিবুল্লাহ’র
দুই বক্তব্যের মধ্যে কোন ফারাক নেই,
এখানেও তার সত্যতা যাচাই করা যায়।
যদিও
কালেরকণ্ঠ কয়েকদিন আগে এক রিপোর্টে মুহিবুল্লাহ’র ট্রাম্পের সাক্ষাতে গিয়ে বাংলাদেশের নামে
বিচার দিয়ে এসেছে এই গুজব রটায় (https://bit.ly/3467qbq,
আর্কাইভ- http://archive.fo/voRDP)।
অথচ মুহিবুল্লাহ’র
ভিডিও ক্লিপের সাথে কালেরকণ্ঠের অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
শুধু
তাই নয়, কালেরকণ্ঠ
মহল গুজব রটায়- রোহিঙ্গা কাম্পে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধারালো অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।
যদিও সরবারহকারী এনজিও বক্তব্য হলো এটা কৃষকদের জন্য সরবারাহ করা নিড়ানি, যা রোহিঙ্গা
ক্যাম্প থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে এক কামারের দোকানে পাওয়া গেছে, যার সাথে
রোহিঙ্গা সমাবেশের কোন সম্পর্ক ছিলো না। (https://bit.ly/32fzYNE)।
তাছাড়া
রোহিঙ্গা সমাবেশে এমন কোন অংশ ছিলো না, যার জন্য নিড়ানির দরকার আছে বলে মনে হয়েছে।
এটা স্পষ্ট কোন একটি মহল নিড়ানি আর সমাবেশকে এক করে সমাবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে।
যাই হোক, এবার
আপনাদের একটা বলি- রোহিঙ্গারা শন্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে, একত্র
হয়ে দোয়া মোনজাত করলে, আপনি কি আগে কখন হুমকি ফিল করছিলেন? নাকি
মিডিয়া এবার আপনাকে শিখিয়ে দিলো,
আর আপনি হুমকি হুমকি করে মুখস্ত আওড়ালেন?
ধরে নিলাম-
আপনি বিষয়টি নিয়ে হুমকি ফিল করেননি, যদি আপনি না করেন, তবে কারা এই সমাবেশকে হুমকি মনে করেছে? তাদের
আগের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো? অবশ্যই সেই হুমকিটা ছিলো বার্মা সরকার এবং বার্মার বৌদ্ধদের জন্য।
এজন্য
তারা সেই সমাবেশকে টার্গেট করে গুপ্তচরও পাঠায়, সেখানে রোহিঙ্গারা কি আলোচনা করছে সেটা জানার
জন্য। এবং সেখান থেকে ২ জন বার্মীজকে গ্রেফতারও করা হয় একটা নিউজে দেখলাম। শুধু তাই
নয়, রোহিঙ্গা
ক্যাম্পের ভেতর বার্মীজ সরকারের গুপ্তচর হয়ে তথ্য সরবরাহ করার জন্য কয়েকজনকে হত্যা
করা হয়েছে বলেও বিবিসির খবরে এসেছে। (https://www.bbc.com/bengali/news-49476387)
রোহিঙ্গা
সমাবেশের একটা ভিডিও দেখে যা বুঝলাম- তারা বার্মীজ সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তব্য
দিয়েছে। এবং বাংলাদেশের প্রতি একাধিকবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। এ সমাবেশের সিস্টেম
ছিলো বেশ গোছালো, যা
চোখে পড়ার মত। নারীরা এক সাথে,
বৃদ্ধ ও মধ্যবয়সীরাও এক সাথে। এবং তরুণ-যুবক রোহিঙ্গারা একসাথে।
তাদের গায়ে ছিলো এক ধরনের গেঞ্জি। আমার কাছে মনে হয়েছে, বার্মীজ
সেনার বন্দুকের গুলিতে তাদের যে ক্ষত হইছিলো, সেটা কিছুটা হলেও শুকিয়ে তারা গোছাতে শুরু
করেছে এবং সেটাই তাদের সমাবেশে লক্ষণীয় ছিলো। (https://youtu.be/iUEfOAUS6wc)
রোহিঙ্গাদের
দাবীর মাধ্যমে এটা প্রচার করে- তারা একটি স্ট্যাবেল জীবন চায়। তারা চায় না, তাদের
নিয়ে নতুন কোন খেলা/নাটক হোক। কারণ সম্প্রতি বার্মা সরকার যে প্রত্যাবসনের কথা বলছে, সেটা
একটা নতুন নাটক। সেখানে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর সেই
তালিকায় আছে মাত্র ২২ হাজার রোহিঙ্গা, যা মোট রোহিঙ্গার ২% ও না। আর এভাবে মাসেও
যদি সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা নেয়া হয়,
তবে বছরে নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ হাজার। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা যেতে
সময় লাগবে ২৫ বছর। সুতরাং এই নতুন করে ছেলে-খেলা তারা চায় না, তারা
চায় সব রোহিঙ্গা এক সাথে নিরাপত্তার সাথে অধিকার নিয়ে যাবে। এবং সেই দাবী জানাতে তারা
একত্রও হয়েছে, আর
সেটাই মায়ারমারের ভয়ের কারণ।
রোহিঙ্গা
সমাবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- এই সমাবেশ তিনি বাংলাদশের জন্য কোন হুমকি হিসেবে
দেখছেন না।(https://bit.ly/2ZyYqfr)
অথচ একটি
মহল মিডিয়ায় প্রচার করেছে- সরকার কেন এই সমাবেশের অনুমুতি দিলো।
কথা হলো-
যে মহলটি এটা প্রচার করেছে,
তারা কি বাংলাদেশের স্বার্থে করেছে? নাকি মায়ানমারের
স্বার্থের বিরুদ্ধ যাওয়ায় সমাবেশের অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে?
সত্যিই
বলতে- আমি হুজুগে বিশ্বাসী নই। ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশের দিকে
আসতে শুরু করে, তখন
আমার কোন ব্যক্তিগত কোন সমস্যার কারণে ২-৩দিন ফেসবুকে আসতে পারি নাই অথবা রোহিঙ্গা
বিষয়টি নিয়ে অত আমলে নেইনি। কিন্তু হুজগে মাতাল জনগণ পারলে আমার ফেসবুক পেইজ ভেঙ্গে
ফেলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়ার জন্য। এবং এখনও দেখছি সেই হুজুগে গোষ্ঠী এখন
আবার রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে বলছে।
এ সম্পর্কে
একটা কথা মনে পড়লো। গুলিস্তানে দাড়িয়ে যৌন সমস্যার নামে ওষুধ বিক্রি করতে দেখেছেন নিশ্চয়ই।
ঐ রকম একটা হাতুড়ে লোকের সাথে একদিন আলাদাভাবে কথা বলতে পেরেছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করেছিলেন-
আচ্ছা আপনারা যৌন সমস্যা কাকে বলেন?
তার বক্তব্য ছিলো- “যার উত্তেজনা দ্রুত উঠে, আবার
দ্রুত নেমে যায়, তাদের
আমরা যৌন সমস্যায় আক্রান্ত হিসেবে দেখি।” তার কথা সত্য মিথ্যা জানি না, তবে তার
এই ‘দ্রুত
উঠা এবং দ্রুত নেমে যাওয়া’র
লক্ষণটা আমি বাংলাদেশীদের মধ্যে দেখি। কোন কিছু দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ে, দ্রুত
হুজুগ উঠে, আবার
দ্রুত হুজুগ নেমে যায়।
কথা হলো-
যেই হুজুগে মাতাল গোষ্ঠী এখন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তব্য দিচ্ছে, তারা
নিজেরাও জানে না, রোহিঙ্গাদের
কিভাবে ফেরত পাঠাতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের চাপ দিলে তারা আদৌ ফিরতে পারবে কি না?
কিন্তু
আমার দৃষ্টিতে রোহিঙ্গারা গত ১ সপ্তাহে যে পলিসি দেখিয়েছে, সেটাই
সকল রোহিঙ্গাকে সঠিক উপায়ে প্রত্যাবসনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ও কার্যকর পদ্ধতি এবং সেটাই
বার্মীজ সরকারের জন্য আসল ভয়ের কারণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মায়ানমার
সরকার যে বিষয়টিকে থ্রেট মনে করছে,
সেটাই সে কৌশলে বাংলাদেশের মিডিয়া, প্রশাসন
ও জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে,
নিজের থ্রেটকে বাংলাদেশের থ্রেট বানিয়ে, বাংলাদেশকে
দিয়ে তা দমন করতে চাইছে,
আর আমরা বোকা জনগণ সেই ফাদে পা দিয়েছি।
তাই আমরা
যদি সত্যিই চাই সকল রোহিঙ্গা ফিরে যাক, তবে রোহিঙ্গাদের নতুন সুগঠিত পলিসির বিরুদ্ধে
নয়, বরং
তার পক্ষে বলা উচিত, সমর্থন
ও সহযোগীতা দেয়া উচিত। তাহলেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনের বিষয়টি সুন্দর ও ভালো একটি সমাধান
এগিয়ে আসবে বলে মনে হয়।
খবর বিভাগঃ
নয়ন চ্যাটার্জি
মতামত
রোহিঙ্গা
0 facebook: