স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে পরিচয়ের পর ইমোর ভিডিও কলে প্রবাসী যুবকের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে
কলেজ ছাত্রী সালমার। মাস পেরিয়ে বছর ঘুরে নানা কথায়
আর আশ্বাসে বুক বাঁধেন সেই প্রেমিকা। স্বপ্নের রাজকুমার একসময় ফিরে আসবেন দেশে। চোখে রঙ্গীন স্বপ্ন আর বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে তথাকথিত 'প্রেমের সার্থকতা' পুরনে
প্রেমিকের দাবীর মুখে গ্রাম থেকে পরিবারের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে যুবতী তার লালিত প্রেমের
বাসর সাজান জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে। এরপর থেকেই
বদলে যেতে থাকে প্রেমিকের আচরণ! ততদিনে সব হারিয়ে তরুনী হয়ে পড়েন দিসেহারা! সেই
চেনা প্রিয় মানুষটা কেমন যেন ভয়ানক অচেনা হতে শুরু করে!
ঘটনাস্থল
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ৩নং রসুলপুর ইউনিয়নের। ঐ ইউনিয়নের জিন্নতপুর গ্রামে বিয়ের দাবীতে আমরন অনশন
শুরু করেছেন উপজেলার দেবিদ্বার মহিলা কলেজের ছাত্রী ছালমা আক্তার (১৭)।
এই ঘটনায় পুরো
এলাকাজুড়েই বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। আশেপাশের গ্রাম ত্থেকে কৌতূহলী ছেলে, বুড়ো সহ
নারীদের ভিড় বাড়ছে অনশনকারী প্রেমিকাকে দেখতে। ঘটনাস্থলে এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ছালমা। ‘হয় বিয়ে, নয় মৃত্যু!’ হাতে রাখা ‘বিষের বোতল’ উচিয়ে অকপটেই এমন দাবীর কথা জানালেন অনশনকারী কলেজ পড়ুয়া যুবতী।
যুবতী জানালেন,
মিজানের সাথে দীর্ঘ ৪ বছরের প্রেম তার। মিজান বিদেশ থাকাকালীন মোবাইলে
চলে তাদের প্রেম। গত দুই বছর আগে বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করার কথা বলে কুমিল্লার একটি আবাসিক
হোটেলে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে মিজান। এরপর নানা কৌশলে সেবার বিদেশ চলে যায় মিজান। সম্প্রতি সময় আবার দেশে আসে সে। তবে ছালমাকে না জানিয়ে অন্য
কোথাও বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে মিজান। এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এক পর্যায়ে মিজান তাকে ইমুতে বলে ‘বিশ্বাস না হলে আমাকে তুই আর কল দিবি না।’
প্রেমিক মিজান
বিয়ে করছে এমন সংবাদ পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন ছালমা। স্থানীয় মেম্বারকে বিষয়টি জানানোর পরও কোন পদক্ষেপ
নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে ছালমা জানালেন, তাই উপায় না
পেয়ে আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে একটি চিরকুট লিখেছি। ব্যাগে বিষ নিয়ে নিজের ভালবাসার স্বীকৃতির জন্য
রবিবার সকালে মিজানের বাড়িতে ছুটে এসেছি। সেখানে গিয়ে বিয়ের দাবিতে অনশন করছি। ছালমা আক্তার জানান, আমাদের চার বছরের সম্পর্ক এবং
বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এখন কোন কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ভাঙ্গতে যাচ্ছে। তাই আমি সব ছেড়ে এখানে চলে
এসেছি।
সাথে বিষের
বোতল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ছালমা বলেন, বিয়ের কথা বলে
কুমিল্লায় নিয়ে আমাকে নষ্ট করছে। এখন এ ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। আমি বাবা-মা পরিবার সব ছেড়ে চলেছে এসেছি। সে যদি আমাকে মেনে না নেয় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ছাড়া
কোন উপায় নেই। ‘এখান থেকে আমার লাশ ছাড়া কিছুই যাবেনা’ দৃঢ় কন্ঠেই জানিয়ে এবার থামলেন ছালমা আক্তার।
খোজ নিয়ে জানা
গেছে, মিজান জিন্নতপুর প্রবাসী খোরশেদ আলমের ছেলে। ঘটনার দিন প্রেমিকার আসার খবর
পেয়েই সকাল থেকে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন মিজান। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ।
মেয়ের চিরকুটে
মিজান লেখা থাকলে তবে সে এলাকায় সাদ্দাম নামে পরিচিত। এ ঘটনায় ছেলের মা সেতরা বেগম জানান, আমার ছেলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলেকে না পেলে তো এই সমস্যার সমাধান সম্ভব না। রবিবার ভোররাতে এ রিপোর্ট লেখা
পর্যন্ত ছালমা আক্তার ছেলের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
এ প্রসঙ্গে
জানতে ৩নং রসুলপুর ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান কামরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব
হয়নি। বিষের বোতল নিয়ে অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম জানান, আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং বিয়ের জন্য ব্যবস্থা করতে বলেছি এবং আমি
বিয়েতে উপস্থিত থাকব তাও বলেছি।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার সার্কেলের সিনিয়র এএসপির নিকট জানতে চাইলে, মুহম্মদ সেলিম শেখ
প্রতিবেদক কে বলেন, বিষয়টা জেনেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
দেবিদ্বার
থানার অফিসার ইন চার্জ(ওসি) মিজানুর রহমান জানালেন, এই বিষয়ে জানিনা, তবে অফিসিয়ালি অভিযোগ করলে
ব্যবস্থা নেব।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
জেলা সংবাদ
সারাদেশ
0 facebook: