![]() |
কিন্তু যে ‘মানিক্কে মালারায়া পুভি’ গানে অভিনয় করে আলোচনার ঝড় তুলছেন প্রিয়া, সেই গানটি মূলত একটি ইসলামি সংগীত। এতে মহান আল্লাহ পাকের রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজাতুল
কোবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মধ্যকার পবিত্র মুহব্বতের কথা বলা হয়েছে।
শুরুতে অনেকে প্রিয়ার
চোখ মারার দৃশ্যের প্রশংসা করলেও বিষয়টির গোমড় ফাঁস হওয়ার পর প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা করে লেখা গজলের সাথে এমন অশ্লীল আর যৌনতায়পূর্ণ এমন
দৃশ্যায়নের সমালোচনার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এ নিয়ে
সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ যুবকেরা সোচ্চার হয়েছেন। এমন একজন হলেন আরজু আহমেদ। ফেসবুকে প্রকাশিত উনার একটি লেখা তুলে ধরা হল- চোখ টিপ দেওয়ার
যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তা মূলত কেরালায় নির্মিত মালয়াম ভাষার চলচ্চিত্র ‘অরু আধার লাভ’- এর। ছবিটির এই দৃশ্যে যে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি
কিন্তু এ সিনেমাটির জন্য লেখা নয়। মূলত এটি একটি ইসলামি লোক-সংগীত।
যা কেরালার
ম্যাপিলা মুসলিম সমাজে বেশ জনপ্রিয়। এগুলোকে ‘ম্যাপিলা গান’ বলা হয়। ‘মানিক্কে মালারায়া পুভি/মাহদিয়া
কা খাদিজা বিবি’। শিরোনামের গানটা মূলত আল্লাহ্র
রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তাহালা আনহু এর মধ্যকার পবিত্র ভালোবাসা সম্পর্কে
লেখা।
ছোট্ট এই গানে ৩
বার খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তাহালা আনহু- এর নাম এসেছে, আল্লাহ্র রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার নাম ‘মোহাম্মদ’ এসেছে ২ বার, ‘রাসুলুল্লাহ’ ১ বার, ‘খাতামুন-নাবিয়্যিন’ শব্দটা এসেছে ১
বার, পবিত্র নগরি ‘মক্কা’ শব্দটা আছে ‘৩’ বার।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে
এমন একটি অশ্লীল দৃশ্যপটের সঙ্গে এই পবিত্র নাতে রাসূল জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা কেবল জঘন্যই নয় বরং অসহনীয়। আরও মন্দ ব্যাপার হচ্ছে, মুসলমানরা সেটিকে কেবল গ্রহণই
করেনি, জ্ঞাতে হোক অজ্ঞাতে হোক, এর সর্বাত্মক প্রচারও করে চলেছে।ম্যাপিলা
শব্দটা মূলত এসেছে দ্রাবিরিয়ান ‘মহা+পিলা’ থেকে। মহা বলতে মহান, আর পিলা অর্থ পুত্র। অর্থাৎ মহানদের পুত্র, মানে আরবদের সন্তান। যে কয়টা ঐতিহাসিক লোক বর্ণনা পাওয়া যায়, তাতে উপমহাদেশের প্রথম ইসলাম আসে কেরালার এ অঞ্চলে।
নবুওয়তের ১০ বছরের
মাথায় ত্রিশুরের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর কদুংগাল্লুরে মসজিদ নির্মিত হয়। সর্বশেষ ‘ছেঁড়া
সম্রাজ্যের’ শাসক ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এখানে এই মসজিদ নির্মাণ
করেন।
এটি
বিশ্বাসযোগ্য এ জন্য যে, মালাবার উপকূল দিয়ে আরবদের
সঙ্গে এ অঞ্চলের সমুদ্র যোগাযোগ ইসলামের আগমনের বহু পূর্বের। ফলত এ অঞ্চলের মুসলমানদের ভাষায় আরবির আধিক্য বেশি। উপমহাদেশের অন্যসব মুসলমানের সঙ্গে নানাবিধ দিকে তফাত
আছে। যেমন পুরো উপমহাদেশ ফিকহে
হানাফির অনুসরণ করলেও এ অঞ্চলের মানুষ শাফেয়ি মাজহাবের অনুসরণ করেন। ইবনে বতুতা যা নিয়ে বিস্ময়ের কথা লিখে গেছেন।
কেরালায়
প্রখ্যাত বুযুর্গ তাবিয়ি মালিক দিনার রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মাজার রয়েছে এখনও। তিনি এসেছিলেন ইসলামের প্রচারে। ডাচরা কেরালায় ষোড়শ শতকে পৌঁছালে শায়খ জায়নুদ্দিন আল মাখদুম রহমতুল্লাহি আলাইহি জিহাদ ঘোষণা করেন। এই জিহাদ ডাচরা বিদায় হবার
পূর্ব পর্যন্ত চালু ছিল।
তিনিই
উপমহাদেশের প্রথম আলিম যিনি ইউরোপিয়ানদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। উনিশ শতকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন কুতুবে
জামান শায়খ আলাভি, উমর কাজী, শায়খ ফজল রহমতুল্লাহি আলাইহি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তামাম অঞ্চলে মুসলমানদের অবদানই
প্রধানতম। কিন্তু আধুনিক কেরালার ইতিহাসে
বহু কাটছাঁট পড়েছে। ভারতে মুসলমানদের অবদানকে যেমন
অস্বীকার করা হয়েছে, তেমনি ৮০০ বছরের শাসনের
ইতিহাসকে ইচ্ছেমতো বিকৃত করেছে। সর্বশেষ চলচ্চিত্রে সিনেমায় নাটকে তা করা হচ্ছে।
প্রথমে তারা
আমাদের সিনেমামুখী করল, এবার দাঁড় করাচ্ছে ইসলামের
সঙ্গে মুখোমুখি! পদ্মাবতী থেকে অরু আদার লাভ- ইসলাম আর মুসলমানের সঙ্গে তামাশা
চলছে। আর মুসলমান তা কেবল উপভোগ করছে!
আমাদের স্মরণ
রাখা উচিত, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর স্ত্রীগণ ‘উম্মুল মুমিনিন’ অর্থাৎ উম্মতের জন্য
সাংবিধানিকভাবে মা। আর আল্লাহ্র রাসুলের মর্যাদা
তো বর্ণনার অতীত! তাঁদের মধ্যকার পবিত্র যে ভালোবাসা তাকে ইসলামের দৃষ্টিতে যে
প্রেম হারাম তার সঙ্গে উপস্থাপন!
আর সেটিকে
আমাদের প্রশ্রয় প্রদান- ওয়াল্লাহি, এ ব্যাপারে আমাদের কিন্তু
আল্লাহ্র কাছে অবশ্যই জবাব দিতে হবে! এ ভুলের জন্য তওবা করা আবশ্যক! আর রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে যা বেয়াদবি তা থেকে দূরে থাকা ঈমানের প্রধানতম দায়িত্ব।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ধর্ম ও জীবন
ধর্মীয় বিদ্বেষ
0 facebook: