এই প্রথমবারেরর মতো বিনিময় মূল্যের তালিকা থেকে মার্কিন ডলারকে বাদ দিয়েই নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইরান ও ইরাক। ব্যবসায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়াল, ইউরো ও ইরাকি দিনার ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ইরান-ইরাক চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়ায়া আলে-ইসহাক। পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে কিভাবে উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত শনিবার ইরানের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি আরো বলেন, ইরাক ও ইরানের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের আরেকটি ভিন্ন উপায় হিসেবে পণ্যের বদলে পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রেও ঐকমত্যে পৌঁছেন।
বাণিজ্যে বিনিময়মূল্য হিসেবে মার্কিন ডলার বাদ দিলে উভয় দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা কেমন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উভয় দেশ প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য করবে। তবে এ অর্থের খুব কম অংশই ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিময় হবে। নাজুক এ সময়ে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ইরাক ও ইরানের ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়টি অগ্রাধিকারে রয়েছে বলেও জানান ইয়ায়া আলে-ইসহাক।
এ দিকে কয়েক মাসে ইরাকে নিজেদের সহযোগীদের কাছে স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে ইরান। একই সাথে বিভিন্ন শিয়াগোষ্ঠীকে নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও সহায়তা করছে দেশটি। ইরানের ওপর সম্ভাব্য আক্রমণের একটি ব্যাকআপ পরিকল্পনা হিসেবে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইরানি এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির আওতায় ২০১৬ সালে দেশটির ওপর থেকে আন্তর্জাতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একই সাথে যেসব কোম্পানি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে উপসাগরীয় এ দেশটি, যা বেশ কিছু রাজনৈতিক সঙ্কটও সৃষ্টি করেছে। নতুন এ নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে দেশটি ছেড়ে যেতে শুরু করেছে এবং বড় আকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন উপায় খুঁজে চলেছে রুহানির সরকার।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইরাকের সাহসী সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তারই ফলে ডব্লিউটিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার হুমকি দেন তিনি। ব্লুমবার্গ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাদে আর সবার সুবিধার জন্য ডব্লিউটিও গঠন করা হয়েছে। তিনি আরো দাবি করেন, সংস্থাটির সব মামলাতেই আমরা হেরে যাই। ট্রাম্পের মতে, সংস্থাটি প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডব্লিউটিওর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাদি হিসেবে ডব্লিউটিওতে প্রায় ৯০ শতাংশ মামলাতেই জয় পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দিকে বিবাদি হিসেবে সমান হারে পরাজয় লাভ করেছে দেশটি। যদিও চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা, মেক্সিকো ও তুরস্কের পাল্টা শুল্কারোপের মীমাংসায় ডব্লিউটিওর সহায়তা চেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুসারে দেশগুলোর পদক্ষেপ অবৈধ হয় বলে যুক্তি দেখিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ডব্লিউটিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের হুমকি মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সংরক্ষণবাদী বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সংস্থাটির মুক্তবাণিজ্যব্যবস্থার সঙ্ঘাতকেই তুলে ধরেছে।
খবর বিভাগঃ
অন্যান্য সংবাদ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: