এ ব্যাপারে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে সিনিয়র সচিব মুহম্মদ সোহরাব হোসাইন এ নির্দেশনা পাওয়ার কথা স্বীকার করে নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে বিদ্যমান আইনের সংশোধনী আনতে হবে। এ নিয়ে কাজ শুরু হবে আগামী কিছু দিনের মধ্যেই।
সিনিয়র সচিব মুহম্মদ সোহরাব হোসাইন আরো বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ফলে শিক্ষার মান নিশ্চিতের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে অব্যাহত রাখতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মান নিশ্চিত করার সম্ভব হবে না।
আগামীতে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের(স্কুল-কলেজ) সব ধরনের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমেই করতে হবে। তবে, সবার আগে গত ২০১৫ সালে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএর সংশোধিত আইনের আরো ব্যাপক সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে। এনটিআরসিএর সংশোধিত আইনে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়ও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এ পরিবর্তনের ফলে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মান ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি একটি পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি বা ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃত্ব এবং নিয়োগবাণিজ্য বন্ধ করা যাবে। গভর্নিং কমিটি বা ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মান ও যোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এসেছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা জানান। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ ও নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।
এসব পদক্ষেপ সম্পর্কে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, সম্প্রতি সকল স্কুল-কলেজকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে শিক্ষাঙ্গনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের সব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা এবং চার মাস পরপর ক্লাস ক্যাপ্টেন পরিবর্তন অন্যতম। এর আগে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে ৩৯ হাজারের বেশি বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ অন্যতম।
তবে তিনি স্বীকার করেন, এ সব নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে ইতোমধ্যেই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) দাবি করেন, মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কঠোর হলে এসব জটিলতা শিগগিরই দূর করা যাবে।
মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে আগামীতে আরো কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে স্কুল ও কলেজগুলোকে। এসব নির্দেশনা অনুসরণ না করা হলে অভিযুক্তদের এবং প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও সরকারি সব ধরনে সুযোগ-সুবিধা বাতিল এবং শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশ স্থগিত বা একেবারেই স্থগিত করা হতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে থেকে নতুন নিয়মে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে শিক্ষক পদের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের একাধিক ধাপে পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। নতুন নিয়মে বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ এবং এমপিওভুক্ত (বেতনের সরকারি অংশ পেতে যোগ্যতার প্রথম ধাপ) হতে নিবন্ধনের জন্য লিখিত পরীক্ষার আগে এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপে অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপির সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ অন্য সব কাগজপত্র পাঠাতে হয়। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের যথারীতি নিবন্ধন সনদ দেয়া হচ্ছে।
নতুন নিয়ম অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরভিত্তিক শূন্য পদের সংখ্যা নিরূপণ, শূন্য পদের সংখ্যা অনুযায়ী লিখিত নিবন্ধন পরীক্ষার পর নির্ধারিত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধা তালিকা করা হচ্ছে। এরপর মেধাক্রম ও চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করছে এনটিআরসিএ। স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটি শুধু যোগদানপত্র দেবেন। তবে কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হবেন না।
উল্লেখ্য, এতদিন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা বা গভর্নিং কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তারা বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা আবেদন করার সুযোগ পেতেন। তারাই পছন্দমতো নিয়োগ দিতেন। নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির এ কর্তৃত্ব আর থাকছে না। তারা শুধু এনটিআরসিএর মনোনীত শিক্ষকদেরই কেবল নিয়োগপত্র দেবেন। নিয়োগ না দিলে নতুন আইন ও বিধিমতো স্কুল-কলেজের নিবন্ধন-স্বীকৃতি ও এমপিও বাতিল হবে।
0 facebook: