09 April 2019

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার আগের বছরের তুলনায় কমেছে।

গত তিন মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উপস্থাপিত ২০১৯ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি আরও জানান, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে শিগগিরই বৈঠক ডাকা হবে।

ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে শফিউল আলম বলেন, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঁচটি, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ৩৬টি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে ২৪টি (৬৬.৬৭ শতাংশ), সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে ১২টি (৩৩.৩৩ শতাংশ)। এ সময়ে অনুমোদিত নীতি বা কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে দুটি, চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে একটি ও সংসদে আইন পাস হয়েছে পাঁচটি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে সাতটি, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ৬৩টি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে ৪৩টি (৬৮.২৫ শতাংশ), বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের সংখ্যা ছিল ২০টি। উল্লিখিত সময়ে নীতি বা কর্মকৌশল নেয়া হয়েছিল তিনটি, সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল চারটি ও সংসদে আইন পাস হয়েছিল ১৫টি। অর্থাৎ চলতি বছর মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে।

এদিকে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা নিজেরাই এটার বিষয়ে মিটিং ডাকব। পিডব্লিউডি এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ সচিবালয়ের ভবনগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনার আশঙ্কা না থাকলেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শফিউল আলম। তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ের এক নম্বর ভবনটি (মন্ত্রিপরিষদ ভবন) ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবনটি ৬৭ বছরের পুরনো, যা এরই মধ্যে ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে।’ শফিউল আলম বলেন, ‘সচিবালয়ের ভবনগুলোতে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিদুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই। প্রত্যেকটি ভবনে আলাদা করে সার্কিট ব্রেকার বসানো হয়েছে।

এ কারণে সচিবালয়ের ভবনগুলো অগ্নিঝুঁকিমুক্ত। তারপরও পিডব্লিউডি প্রত্যেকটি ভবনে আগুন নিরোধক এক্সটিংগুইসারগুলো চেক করছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এক্সটিংগুইসার পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে অন্যান্য যাবতীয় ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত সব মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা খুঁজে বের করতে বৈঠক করব। তবে এখনও ডেট ঠিক হয়নি।’ শফিউল আলম বলেন, ‘সচিবালয়ের এক নম্বর ভবনটি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকায় ওই ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের সভাস্থল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে ছয় নম্বর ভবনে (২০ তলা ভবনের ১৩ তলায়) বৈঠকের সভাস্থল স্থানান্তরিত হয়েছে। এক নম্বর ভবনে অবস্থিত সরকারি অন্য কর্মকর্তাদের দফতর স্থানান্তরে সচিবালয়ের মসজিদের সামনে বিদ্যমান টিনশেড ভেঙে ভূমিকম্প ও অগ্নিপ্রতিরোধসম্পন্ন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।

এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।’ অপর প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, ‘সিলেটের নির্দিষ্ট একটি অঞ্চল থেকে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়া যায়। অন্তত দুই মিনিট আগে যদি ভূমিকম্পের সিগন্যাল পাওয়া যায়, তাহলে এই ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব।’ সম্প্রতি পুরান ঢাকার চকবাজারে ও বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির পর বহুতল ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে নড়েচড়ে বসেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তবে সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান সচিব শফিউল আলম।


শেয়ার করুন

0 facebook: