14 July 2019

ইরাকে পুরুষরাই বেশি যৌন নিপীড়নের শিকার


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আরব বিশ্বের দেশগুলোতে পরিচালিত বিবিসির এক জরিপে দেখা গেছে নারীদের তুলনায় পুরুষরাই নাকি বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সেখানকার দেশগুলোতে। জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে ইরাকে এর হার সব থেকে বেশি। এই জরিপ প্রকাশের পর এ তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বেশ হৈচৈ পড়ে গেছে।

ইরাকে পুরুষরাই বেশি যৌন নিপীড়নের শিকার। বিবিসির এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিবিসি নিউজ আরবের ১০টি দেশ এবং ফিলিস্তিন অঞ্চলের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা গেছে আরবের দুই দেশ - তিউনিসিয়া ও ইরাকে - নারীর চেয়ে বেশি পুরুষরাই বেশি মৌখিক ও শারীরিক যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন।

তিউনিসিয়ায় নারী ও পুরুষের এই ব্যবধান মাত্র ১%। সেখানকার ৩৯% পুরুষ মৌখিক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং নারীদের মধ্যে ৩৩% কে এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

অন্যদিকে, ইরাকের ২০% পুরুষ জানিয়েছেন যে তারা শারীরিক যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যেখানে নারী শিকার হয়েছেন ১৭%।

ইরাকে নারীর অধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ বলা চলে - ইরাকি পেনাল কোড ৪১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে প্রহার করেন তাহলে সেটা বেআইনি হবেনা।

তবে গবেষণা নেটওয়ার্ক আরব ব্যারোমিটার, যারা কিনা এই জরিপ পরিচালনা করেছেন, সেখানকার গবেষণা সহযোগী ডা. ক্যাথরিন টমাস, সতর্ক করে বলেছেন যে যৌন হয়রানির শিকার নারীরা হয়তো চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করেন।

মিস টমাস বলেন, হয়রানির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলা বা অভিযোগ দাখিল করা তাদের কাছে বিব্রতকর ও অপ্রীতিকর মনে হয়। অভিযোগ দায়ের করলে তাদের ওপরেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও করেন তারা।

পুরুষের তুলনায় নারীদের এমন হয়রানির আশঙ্কা আরও বেশি বলে ভাবা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইরাক বিষয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষক বেলকিস উইলে মিস টমাসের বক্তব্যে একমত পোষণ করেন।

নারীরা গৃহ নির্যাতন বা যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও এই বিষয়গুলো সামনে আনতে চাননা। অনেকে এই শব্দগুলোর সঙ্গেই পরিচিত নন।, তিনি বলেন।

ইরাকি হাসপাতালে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে, বলে তিনি জানান।

আইন অনুসারে হাসপাতালগুলোতে সব সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা উপস্থিতি থাকেন এবং কোন নারী যদি জানান যে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাহলে ডাক্তার বিষয়টি ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানাতে বাধ্য থাকবেন।

তিনি বলেন, প্রায়শই মহিলা মিথ্যা বলেন এবং অপরাধীদের রক্ষা করেন, বিশেষ করে যদি তারা তাদের পরিচিত হয়, কারণ তারা একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করতে ভয় পান। যেখানে তাদেরও শাস্তি ভোগ করার ঝুঁকি থাকে।

ইরাকের সমাজ পুরুষদের এই বিষয়ে কথা বলার অনুমোদন না দেয়ায় অপরাধগুলো কখনোই অভিযোগ আকারে সামনে আসেনা।

এ ব্যাপারে ইরাকি পুলিশের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, আমাদের দরজা সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত আছে। ভিক্টিমরা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দায়ের করার পর নির্যাতনকারীদের আটক করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ২০০৩ সালে মানবাধিকার বিষয়ে নতুন একটি কৌশল হাতে নেয়া হয়েছে এবং এই ধরনের মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা মিলিয়ে আরবের ১০টি দেশ - আলজেরিয়া, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মরক্কো, সুদান, তিউনিসিয়া, এবং ইয়েমেন - এবং ফিলিস্তিন অঞ্চলে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

মানুষের সংখ্যা, জরিপ এলাকার ব্যাপ্তি এবং প্রশ্নের গভীরতার হিসাবে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জরিপ।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা নেটওয়ার্ক আরব ব্যারোমিটার জরিপটি পরিচালনা করে। সূত্রঃ বিবিসি বাংলা


শেয়ার করুন

0 facebook: