15 August 2019

কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত কি সঠিক নাকি আত্মঘাতী? মাথা ব্যথায় কি মাথা কেটে ফেলতে হবে নাকি?

পুরান ঢাকার নবাবপুরে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার স্তূপ। ছবি: সংগৃহীত
স্টাফ রিপোর্ট।। কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ আবদুল লতিফ বকসী।

বিবৃতিতে বলা হয়, উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে- নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। এ বিষয়ে চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কাঁচা চামড়ার গুণাগুণ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য স্থানীয়ভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কাচা চামড়া মানে র-চামড়া। কোন কিছু র-জিনিস রফতানি করা দেশের জন্য ক্ষতিকর। যেমন- গম। গম হলো -র। গম বিক্রি করলে যদি ১০ টাকা পান, সেই গম থেকে যদি আটা ভাঙ্গান তবে পাবেন ২৫ টাকা। সেই আটা দিয়ে যদি রুটি বানান তবে পাবেন ১২৫ টাকা। এখন কথা হলো রগম রফতানি করা লাভজনক, নাকি রুটি রফতানি করা লাভজনক।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএ নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
দেশীয় শিল্প রক্ষায় কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। তারা বলেছেন, কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানি হলে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক বৈঠক শেষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান বাবু, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম প্রমুখ।

এর আগে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএ নেতারা বলেন, ২০ আগস্ট থেকে নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্ধারিত দরে লবনযুক্ত চামড়া সংরক্ষণ করা হবে। কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্পের ক্ষতি বয়ে আনবে।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা ২০ আগস্ট থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করবো। সেই সময় চামড়ার বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আশা করছি এই সময়ের মধ্যে সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।

এর আগে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকসী জানান, উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে না। এ বিষয়ে চামড়াশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া বেচাকেনা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়।

এদিকে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি দাম কমার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন।

বুধবার সকালে রংপুর নগরীর শালবন এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করে আমরা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করলাম- ঈদের দিন দাম এমন কমে এলো, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমরা কাঁচা চামড়া রফতানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, যখনই আমরা কোনো উদ্যোগ নিই, তখনই এটির বিরুদ্ধাচারণ করা হয়। চামড়ার দাম নিয়েও এমনটি হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা বলছেন- কাঁচাচামড়া রফতানি করলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীর জন্য কোনোভাবেই চামড়াশিল্পকে আমরা ধ্বংস করে দিতে পারি না।

তবে আমাদের এ্যানালাইসিস বলছে বাণিজ্যমন্ত্রীর এরূপ উদ্ভট সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। যা হবার তা অলরেডি হয়ে গেছে। আগামীতে যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে পুরোদমে। স্বরনীয় যে, কাচা চামড়া হচ্ছে র-চামড়া। এটা কিছু প্রসেসিং করলে প্রতিটির দাম কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। একধাপ পার হলেই আজকের ২০০/৫০০ টাকার চামড়া ৫ হাজার টাকায় গিয়ে পৌছায়, আরেক ধাপ অর্থাৎ ফিনিশিং দিলেই ১০ হাজার টাকা। এরপর সেই চামড়া থেকে কোন প্রডাক্ট বানালে তার দাম ২৫ হাজার টাকায় পৌছাবে। দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের চামড়া দিয়ে অন্যরা কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে। যেমনভাবে আমাদের সোনালি আঁশ পাটে ভারতে তৈরি হয়েছে পাট কারখানা। তেমনিভাবে আমাদের দেশের কাচা চামড়া দিয়ে ভারতের ট্যনারি বড় হচ্ছে। আর আমরা বঞ্চিত হচ্ছি হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা হতে।


শেয়ার করুন

0 facebook: