আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের নজর এড়িয়ে দেশটির সেনাঘাঁটি থেকে মাত্র ৮১ মিটার দূরে একটি সামরিক পোস্ট বানাচ্ছে চীন। নতুন স্যাটেলাইটের ছবিতে এই ঘটনার চিত্র ধরা পড়েছে বলে
বৃহস্পতিবার জানিয়েছে এনডিটিভি। চীন, ভারত ও ভুটান সীমান্তের ত্রিমাথায় ডোকলাম এলাকায় সম্পূর্ণ সামরিক সজ্জাবিশিষ্ট সেনাঘাঁটি গড়ে তুলছে বেইজিং।
ভুটানের সিকিম
থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত ডোকলাম উপত্যকা নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে ৭৩ দিনের
উত্তেজনা শেষ হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর নতুন এ খবর প্রকাশ পেল। উপগ্রহ চিত্রে দেখা
যাচ্ছে, ভারতীয় পোস্ট থেকে মাত্র ৮১ মিটার দূরে চীন তাদের সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ
করে চলেছে।
যা দেখে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন আসলে কখনও সেনা প্রত্যাহার করেনি। বরং সেনাঘাঁটি
তৈরির কাজ চালিয়ে গেছে। সিকিম সেক্টরে ডোকলামের নিয়ন্ত্রণ ঘিরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
পড়েছিল ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী। ৭৩ দিন পরে উভয় দেশই সেনা প্রত্যাহার করে নেয় বলে
দাবি করা হয়। অবশ্য, চীন কখনই সুস্পষ্টভাবে বলেনি, তারা
তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
পাঁচ মাস পরে
তোলা উপগ্রহ চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। বিতর্কিত এলাকায় পূর্ব-পশ্চিম রোড বরাবর
একের পর এক সেনাঘাঁটি বানাচ্ছে বেইজিং। হেলিকপ্টারপ্যাড বানানোর স্পষ্ট প্রমাণ
মিলেছে। বন্দুক বা ট্যাঙ্কের চিহ্ন না মিললেও
সেখানে তার ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া ওই এলাকায় ১০ কিলোমিটার নতুন রাস্তাও
বানিয়েছে চীন। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ডোকলাম এলাকায় উন্নত রাস্তা, হেলিপ্যাড,
গর্তযুক্ত
কুঁড়েঘর ও মাটির খুঁড়ে আশ্রয়স্থল বানাচ্ছে চীন। কয়েক দিন আগেই চীনকে তোপ দেগেছিলেন
ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। ডোকলামে চীনা সেনা বড় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে বলে
বুধবার দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ।
কিন্তু এদিন চীন
সম্পর্কে সুর অনেকটাই নরম করে ফেললেন রাওয়াত। সম্প্রতি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনা
গতিবিধি নিয়ে সরব হন সেনাপ্রধান। সেই মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল বেইজিং। চীনা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডোকলাম সমস্যার
পরে দু’দেশ ফের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারতীয় সেনাপ্রধানের
এমন মন্তব্যে ফের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বুধবার আবার
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, ডোকলামে বড় ধরনের সামরিক কমপ্লেক্স
তৈরি করছে বেইজিং। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু উপগ্রহ চিত্রে সেই কমপ্লেক্সের
অবস্থানও দেখানো হয়েছে।
বুধবার
রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনায় এক আলোচনায় যোগ দেন সেনাপ্রধান। সেখানে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক ডোকলাম সমস্যার আগে যে
স্তরে ছিল সেই স্তরে ফিরে গেছে। ফলে আপাতত তেমন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’
ডোকলামে যে চীনা
সেনা এখনও রয়েছে তা মেনে নিয়েছেন রাওয়াত। তার দাবি, চীনা সেনাদের
সংখ্যা এখন অনেক কম। তাদের হাতে যে পরিকাঠামো রয়েছে তার বেশিরভাগটাই অস্থায়ী। রাওয়াতের
আশ্বাস, ‘ভারতীয় সেনাও ওই এলাকায় রয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে তার মোকাবিলা করা
হবে।’ নাম না করে এদিন পাকিস্তানকে নিশানা করেন রাওয়াত।
তিনি বলেন,
‘উগ্রবাদীরা
উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যে সব দেশ উগ্রবাদীদের মদদ দেয় সেই সব দেশেরও
মোকাবিলা করা প্রয়োজন।’ এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় উগ্রবাদীদের কার্যকলাপ
সম্পর্কেও মুখ খোলেন তিনি। তার মতে, যে সব সোশ্যাল মিডিয়া উগ্রবাদীরা
প্রায়শই ব্যবহার করে সেগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক দেশে
এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ অনেকেই পছন্দ করবেন না। কিন্তু ভাবতে হবে, নিরাপত্তার
প্রয়োজনে সাময়িক নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয়া যায় কিনা।’
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: