27 September 2018

ফেসবুকে গুজব প্রতিরোধে সাইবার ক্রাইম ব্যুরো


স্বদেশবার্তা  ডেস্কঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইবার ক্রাইমকে অন্যতম হুমকি বিবেচনা করে পুলিশে ‘সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ গঠন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ইউনিট গঠনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৩৬৯টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আলাদা এ ইউনিটটি বাস্তবায়িত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোসহ সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। সাইবার ক্রাইম বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই সাইবার ক্রাইমকে সামনে রেখে তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। দেশে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো বাস্তবায়ন হলে সাইবার অপরাধ কিছু হলেও হ্রাস পাবে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইবার ক্রাইমকে আমরা হুমকি হিসাবে দেখছি। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও ভুয়া তথ্য ও গুজব প্রচার করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব অপরাধ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের অপরাধ সংগঠিত হলে প্রচলিত আইসিটি অ্যাক্ট ও সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আলোকে সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করবে। এর পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো চালু হলে আমাদের ওইসব অপরাধ তদন্তের কাজে গতিশীলতা বাড়বে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো গঠনের জন্য ৫৮৫টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এর প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৬৯টি পদ সৃজনের অনুমোদন দেয়। এরমধ্যে রয়েছে ডিআইজি ১টি, অতিরিক্ত ডিআইজি ২টি, পুলিশ সুপার ৩টি, এডিশনাল এসপি ৬টি, এএসপি ১৯টি, ইন্সপেক্টর ৬৫টি, এসআই (নিরস্ত্র) ১৩০টি, এএসআই ৩৯টি ও কনস্টেবলের ৭০টিসহ বিভিন্ন পদ। এই ৩৬৯টি পদ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় অনু শাখায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘এরই মধ্যে সিআইডি কার্যালয়ে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভের অর্থায়নে ২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এটিকে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’র প্রধান কার্যালয় করা হবে। এ বছরের মধ্যেই সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’র কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে পারে।’

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে দেশে পৌনে ৭ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আড়াই কোটি। পৃথিবীর যেসব শহরে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি, তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ব্যাংকক। এরপরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে সাইবার অপরাধ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই ধরনের অপরাধের শিকার মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ মামলার আশ্রয় নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, সাইবার একটা উন্মুক্ত জায়গা। এখানে যে কেউ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। আমাদের ডিজিটালাইজেশন কিছুটা অপরিপক্বতার সাথে ঘটেছে। শুধু শিক্ষিত মানুষের মধ্যে যে ডিজিটাল প্রযুক্তি গিয়েছে তা কিন্তু নয়। তাই এভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। সাইবার ক্রাইমকে শনাক্ত করার জন্য প্রযুক্তিগত কাঠামো খুবই দুর্বল। আমাদের সাইবার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে মাত্র ১টি। ৬৪টি জেলায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব নেই। কিন্তু সারাদেশে সবার হাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম রয়েছে খুবই সীমিত। প্রযুক্তিগত যেসব অপরাধ সেটাকে মোকাবেলা করতে গেলে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। সাইবার প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করে হয়তো দুই চারটা এডমিনকে গ্রেফতার করে সাময়িক লাভবান হওয়া যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না। বিটিআরসি’র বিভিন্ন গেটওয়ের ভেতরে আমাদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বসিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত করে নজরদারি করলে বিষয়টি বেশি কার্যকর হবে।

জঙ্গি দমনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম বন্ধে ফিজিক্যাল পেট্রোলিংয়ের চেয়ে সাইবার জগতে  পেট্রোলিংয়ে জোর দিতে হবে। এর মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতত্পরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য সাইবার অপরাধ দমনে লোকবল বাড়ানোর পাশাপাশি টেকনিক্যাল সাপোর্ট বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের  চেয়ে দৌড়ে এখন পুলিশ অনেক এগিয়ে আছে। কিছু করার পরিকল্পনার পর্যায়েই তারা ধরা পড়ে যাচ্ছে। তারা অনলাইনে বা বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কাউকে মোটিভেট করতে চাচ্ছে।  যে যেখানে আছে সেখানেই তাকে কাজ সেরে ফেলতে হবে। সেজন্য তারা ছদ্মবেশে বিভিন্ন নামে ফেসবুক, টুইটার গ্রুপ খুলছে। সেখানে তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে। এসব পুলিশের সাইবার  পেট্রোলিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো গঠন হলে শুধু জঙ্গিরা নয়, কেউই সাইবার অপরাধ করে পার পাওয়ার কথা নয়।


শেয়ার করুন

0 facebook: