24 January 2019

পুলিশের বিরুদ্ধে স্বামীকে না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতন ও বাড়ি লুটের অভিযোগ


জেলা প্রতিনিধিঃ অটোরিকশা ভাঙচুর অভিযোগের মামলায় মেহেদী হাসান বাকের নামের এক যুবককে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছেএছাড়া বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোটরসাইকেল লুট করার অভিযোগ এনে লস্কর লাজুল ইসলাম ওরফে জিয়া নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ওই নারী

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা জিয়া মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত রয়েছেনমেহেরপুর পৌর এলাকার দীঘিরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে

গতকাল বুধবার দুপুরে মেহেদী হাসান বাকেরের স্ত্রী মারিয়া খাতুন বাদি হয়ে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো: হাদিউজ্জামানের আদালতে এসআই জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেনআদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শেখ জাহিদুল ইসলামকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন

অন্য দিকে, ওই একই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেহেরপুর পুলিশ সুপার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেনতদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছেকমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি ওবাইদুর রহমান ও ডিআইও ওয়ান ফারুক হোসেন

মামলার বিবরণে প্রকাশ, বাকেরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মারিয়া খাতুনের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে বাড়িতে একা রান্না করছিলএমন সময় এসআই জিয়া আরো দুইজন পুলিশ কনস্টেবল নিয়ে বাড়ির দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেনবাড়িতে কেউ নেই বলাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিনের দরজায় লাথি মারলে দরজা খুলে যায়তখন তিনি ভেতরে প্রবেশ করেনএসআই জিয়া গালিগালাজ করতে করতে ঘরের মধ্যে ঢুকে বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে এবং আলামারিতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করেনপরে রান্না ঘরে মোটরসাইকেল দেখে চাবি চাইচাবি দিতে না চাইলে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেনএকপর্যায়ে চাবি দিলে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের এ্যাপাচি আরটিআর ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং বলেন, টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে আসতে

মেহেদী হাসান বাকের বলেন, সোহেল নামের এক অটোচালকের সাথে আগের একটি বিরোধ থেকে সে থানায় তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেসেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই জিয়া তাকে আটক করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধর ও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করেনতিনি অভিযোগ করে জানান, অপরাধ করলে তিনি করেছেনতার স্ত্রী কোনো অপরাধ করেনিতার বাড়িঘর কোনো অপরাধ করেনিতার বাবাও একজন পুলিশ কর্মচারীতারা এ ঘটনার বিচার চায়
প্রতিবেশী আনজিরা খাতুন জানান, তিনটি পুলিশ এসে বাড়ির ভেতরে সব কিছু ভেঙেচুরে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গেলযাওয়ার সময় আজে বাজে গালিগালাজ করেবাকেরের পোয়াতি ( অন্তঃসত্ত্বা) বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে যায়

বাকেরের নানী সফুরা খাতুন জানান, বারবার করে মোটরসাইকেলটি না নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতজোড় করলাম তবুও শুনল না ওই পুলিশটামোটরসাইকেল নিয়ে গেল আবার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতেও বললএদিকে অভিযুক্ত এসআই লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীনতবে স্বীকার করে তিনি বলেন, বাড়িতে একটি অনটেস্ট (লাইসেন্সবিহীন) মোটরসাইকেল ছিল সেটি নিয়ে এসেছিমোটরসাইকেল কোন অপরাধে নিয়ে এলেন এমন প্রশ্নে তিনি কোনো জবাব দেননি

এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসআই জিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেনতদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে১৪ জানুয়ারি হাসপাতাল এলাকায় একটি অটো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেওই অভিযোগে ১৬ জানুয়ারি বাকেরসহ পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়মঙ্গলবার আসামি বাকেরকে ধরতে যায় এসআই জিয়াএই নিয়ে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসআই জিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছেতদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে


শেয়ার করুন

0 facebook: