আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে একটি মসজিদে খ্রিষ্টান ধর্মীয় এক
সন্ত্রাসী হামলা করেছে। সেখান থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। ঘটনাটিকে ‘মারাত্মক’ বলে বর্ণনা করেছেন সেখানকার পুলিশ।
শহরের মধ্যাঞ্চলে হ্যাগলি পার্কমুখী সড়ক দীন এভিনিউতে আল নুর
মসজিদে এ হামলা হয়। পরে আশেপাশের স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে জরুরি অবস্থা
জারির প্রক্রিয়া চলছে। সেই পবিত্র মসজিদের পাশে থেকে থেকে বন্দুকের গুলির শব্দ
শোনা গেছে।
স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে ২টায় এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ
কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য।
হামলাকালে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ওই মসজিদটিতেই জুমার নামাজ
আদায় করতে যাচ্ছিলেন। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল মাঠে শনিবার বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের
তৃতীয় টেস্ট হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে লিটন দাস ও নাঈম হাসান ছাড়া টাইগার ক্রিকেটারদের
সবাই মাঠে অনুশীলন করছিলেন। অনুশীলন শেষে তারা ওই মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান।
প্রবেশের মুহূর্তে স্থানীয় একজন তাদের মসজিদে ঢুকতে নিষেধ করেন। বলেন
এখানে মসজদে খৃষ্টান সন্ত্রাসীরা হামলা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন খেলোয়াড়েরা। পরে
দৌড়ে মাঠে ফিরে আসেন। তবে খুব কাছ থেকে এমন মারাত্মক ঘটনার সাক্ষী হয়ে
ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটাররা।
দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, দলের প্রতিটি খেলোয়াড় নিরাপদে
আছেন। তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সবাই এখন হোটেলে অবস্থান করছেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুমার নামাজ শুরু হওয়ার একটু আগে কিংবা নামাজ চলাকালে দুইজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী(লোকাল
সূত্রমতে খিষ্টান) পবিত্র মসজিদ এলাকায় গুলিবর্ষণ শুরু করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মসজিদের আশেপাশের ২ কিলোমিটার এলাকা
ঘিরে রেখেছে। পুরো এলাকা কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন। শহরের আশেপাশের সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
টাইগার ক্রিকেটাররা নিরাপদে নিজেদের টিম হোটেলে ফিরে গেছেন বলে
জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। তাতে বলা হয়,
জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে প্রবেশের আগে গুলির শব্দ শুনে ফিরে
আসেন তারা।
মুসলিম খেলোয়াড়দের সঙ্গ দিতে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার, ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন ও
কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস। হামলার টের পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।
হামলার পর ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট যথাসময়ে মাঠে গড়ানো নিয়ে সংশয়
সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি
দেয়নি। শুধু এটুকু জানিয়েছে, পরে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
গিয়েছিলেন জুমার নামাজ আদায় করতে, ফিরতে হয়েছে জানহানির শঙ্কা নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই
আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারররা। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আর
নিউজিল্যান্ডে থাকতে চান না তারা। দ্রুত ফিরতে চান বাংলাদেশে।
সর্বশেষ খবর হলো নিউজিল্যান্ড স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে ২টায়
ক্রাইস্টচার্চের মসিজিদ আল নূরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত
হয়েছেন। আহত হয়েছেন আনুমানিক ২০-৩০ জন। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশংকা করা
হচ্ছে।
সেই মসজিদেই নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তামিম-মিরাজরা। প্রবেশের
মুহূর্তে স্থানীয় এক পথচারী তাদের মসজিদে ঢুকতে নিষেধ করেন। বলেন এখানে সন্ত্রাসী
হামলা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন খেলোয়াড়েরা। পরে দৌড়ে টিম বাসের মধ্যে ঢুকে যান
এবং মেঝেতে শুয়ে পড়ে। খানিক পরই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ভয়াবহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপে
ভীষণ ভয় পেয়েছেন টাইগাররা। দ্রুত দেশে ফিরতে চাচ্ছেন তারা। ক্রিকেটবিষয়ক জনপ্রিয়
ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম ঘটনাস্থলে ছিলেন। খোদ
তিনি নিজেই এ খবর জানিয়েছেন।
মোহাম্মদ ইসাম বলেন,
আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। সব খেলোয়াড় নিরাপদে আছেন। তবে তারা দেশে ফিরে
যেতে চান। তিনি বলেন, আমি মনে করি না, বাংলাদেশ
ক্রিকেটাররা খেলার মতো মানসিক অবস্থায় আছেন। তারা শিগগির দেশে ফিরতে চান। আমার
অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভাল মাঠে শনিবার বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের
তৃতীয় টেস্ট হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ম্যাচটি মাঠে গড়ানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে
এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড।
ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে এলোপাতাড়ি গুলিতে ব্যাপক হতাহতের পর
বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার
জুমার নামাজের সময় যে দুটি মসজিদে হামলা হয়েছে তার একটিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট দল
উপস্থিত ছিলেন।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট প্রধান নির্বাহী ড্যাভিড হোয়াইট বলেন, আমরা মর্মাহত এবং ব্যথিত। আমি
নিশ্চিত, পুরো দেশ আমার মতো ব্যথিত। আমি বাংলাদেশের সঙ্গে কথা
বলেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, এ সময়ে এ খেলার আয়োজন করা উচিত
হবে না।
স্থানীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে মসজিদে জুমার নামাজের সময়
খ্রিষ্টান সন্ত্রাসী কতৃক এলোপাতাড়ি গুলিতে যে ৪০ জন লোক নিহত হয়েছেন, তা করেছে ২৮
বছর বয়সী উগ্র খ্রিষ্টান সন্ত্রাসী একজন অস্ট্রেলীয় যুবক।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, বন্দুক হামলার পর
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব সদস্য নিরাপদে হোটেলে
ফিরে এসেছেন। খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বিসিবি অব্যাহত যোগাযোগ রাখছে।
ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল টুইটারে বলেছেন, গোলাগুলি থেকে পুরো ক্রিকেট
দল নিরাপদে ফিরতে পেরেছেন। এ এক ভীতিপ্রদ অভিজ্ঞতা। দয়া করে সবাই আমাদের জন্য দোয়া
করবেন।
মুশফিকুর রহিম বলেন,
আলহামদুলিল্লাহ, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে
গোলাগুলি থেকে আল্লাহ আজ আমাদের রক্ষা করেছেন। আমরা সত্যিই খুব ভাগ্যবান। এমন ঘটনা
আর দেখতে চাই না। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের ক্রীড়া
প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে যখন তারা উপস্থিত হন, তখন সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চলছিল। সতর্ক করার পরেই হতবিহ্বল খেলোয়াড়রা
বাসের ভেতর চলে যান এবং তারা ফ্লোরে শুয়ে পড়েন।
দেশটির সাউথ আইল্যান্ডের সেই আল নূর মসজিদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল
দিয়ে অন্তত ৫০টি গুলি করা হয়েছে বলে তারা জানান।
সামাজিকমাধ্যমে মসজিদের ভেতর থেকে গোলাগুলির লাইভ ভিডিও সম্প্রচার
করা হয়। স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে যখন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তখন শুক্রবারের জুমার নামাজ
চলছিল।
পার্শ্ববর্তী লিনউড মসজিদেও খ্রিষ্টানদের সন্ত্রাসী হামলায় অনেক
নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। হামলার ঘটনাকে সংকটময় উল্লেখ করে
স্থানীয়দের ঘরের ভেতর থাকতে অনুরোধ করেছে পুলিশ।
ডেইলি মেইল অস্ট্রেলিয়ার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মসজিদের ভেতরে যখন এক খ্রিষ্টান
সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি করছে, তখন মুসল্লিরা সেখান থেকে
পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হলেও তিনিই সে বন্দুকধারী খ্রিষ্টান
সন্ত্রাসী কিনা- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দিনটিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন আখ্যায়িত করে নিউজিল্যান্ডের
প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরডান বলেন,
হতাহতদের পরিবারের প্রতি আমিসহ নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের সমবেদনা রয়েছে।
গোলাগুলির সময় এক ব্যক্তি পালিয়ে যেতে যেতে বলছেন, ফুটপাতে আমার স্ত্রীর মরদেহ
পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার স্ত্রী নিহত হয়েছে। এ সময় তিনি চিৎকার করে কান্না করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আহমাদ আল মাহমুদ বলেন, হামলাকারীদের একজন ছিলেন
শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান। উজ্জ্বল চুলের ওই যুবক হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরেছিলেন।
মসজিদের কয়েকশ লোক যখন নামাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তখনই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। মসজিদটিতে
৩০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ইসলাম
ধর্ম ও জীবন
সন্ত্রাসী হামলা
0 facebook: