আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর হাতে সিরিয়ায় দু’জন ভাড়াটে রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি
রাতে এমন বোম ফাটানো খবর জানা যায়। কিন্তু ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ব্লুমবার্গ দেয়
চাঞ্চল্যকর আরেকটি খবর। এতে বলা হয়,
গত সপ্তাহে মার্কিন সেনারা সিরিয়ায় ১শ’ রুশ
ভাড়াটে সৈন্যকে হত্যা করেছে যা কিনা লড়াইয়ের সময় থেকে দু’ সাবেক
শত্রুর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক
মার্কিন ও রুশ সূত্রসমূহ জানান,
সিরিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেইর আজ-জৌর এলাকায় মার্কিন ও মার্কিন
সমর্থিত বাহিনীর অধিকৃত একটি ঘাঁটি ও তেল শোধনাগার দখলের ব্যর্থ হামলায় ২শ’রও
বেশি ভাড়াটে সৈন্য নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই রুশ। তারা বাশার আল আসাদের পক্ষে
যুদ্ধ করছিল। তবে লাশ গণনার পর মার্কিন কর্মকর্তারা নিহতের সংখ্যা ১শ’ও ২ থেকে
৩শ’ আহতের
কথা জানিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে, রুশ
ভাড়াটে বাহিনীর হামলা কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ছিল না। এটি হতে পারে দুর্বৃত্তদের
একটি হঠকারী অভিযান যা সিরিয়ার সংঘাতের জটিলতর দিকটিকে উন্মোচিত করেছে। উল্লেখ্য
যে, সিরিয়ার
বিরোধীদের দমনের ঘটনায় বাশার বিরোধী যে গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল তা পরিণত হয়
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। তারপর তাতে জড়িত হয় ইসলামী উগ্রপন্থী, রাষ্ট্রহীন
কুর্দি এবং আঞ্চলিক শক্তি ইরান,
তুরস্ক এবং এখন জড়িত হয়েছে ইসরাইল।
রাশিয়া এ ঘটনায় শুধু যে
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো ব্যাখ্যা দাবি করেনি তাই নয়, তারা
বলেছে যে, এ
হামলার ব্যাপারে তাদের কিছু করার ছিল না। মার্কিন সামরিক বাহিনী তাদের কথা মেনে
নিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস গোটা বিষয়টিকে বিরক্তিকর বলে
মন্তব্য করেছেন।
মার্কিন সামরিক মুখপাত্র
কর্নেল টমাস এফ. ভিয়েলি এক বিবৃতিতে বলেন, ব্যর্থ, কোনো উস্কানি ছাড়া পরিচালিত এ হামলার
আগে, হামলা
সময় ও পরে জোট কর্মকর্তারা তাদের রুশ প্রতিপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। রুশ
কর্মকর্তারা আশ^স্ত
করেছেন যে, তারা
জোট বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবেন না।
ভিয়েলি বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি
দিনের শেষভাগে ফোরাত নদীর সঙ্ঘাতমুক্ত সীমানার ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে এ ভয়াহ লড়াই
সংঘটিত হয়। শত্রুরা গুলি বর্ষণ করে এবং আর্টিলারি, ট্যাংক, মাল্টিপল রকেট সিস্টেম ও মর্টারের
সমর্থনে এক ব্যাটালিয়ন পরিমাণ শক্তি নিয়ে হামলা করে। জোট বাহিনীর পক্ষে মৃত্যুর
কোনো ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে শত্রুপক্ষের পশ্চাদপসারণকারী যানবাহন ও লোকজনের উপর জোট
বাহিনী কোনো হামলা করেনি।
এ হামলার ঘটনার অল্পপরই
আল মাসদার জানায় যে সিরিয়ার সরকারপন্থী ‘আইএসআইএস হান্টার’রা ৭
ফেব্রুয়ারি মার্কিন নেতৃতাধীন
জোটের বিমান হামলায় সিরীয় সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন সদস্য নিহত হওয়ার আনুষ্ঠানিক
নিন্দা জানিয়ে রবিবার এক বিবৃতি প্রদান করে। আইএসআইএস হান্টার এ বিবৃতিতে
সুনির্দিষ্ট ভাবে বর্তমানে দেইর এজ জরের উত্তরপূর্ব গ্রাম এলাকার বেশিরভাগ অংশ
নিয়ন্ত্রণকারী মার্কিন জোট ও কুর্দি বাহিনী উভয়ের নিন্দা করে। তব এতে নিহত রুশ
ভাড়াটে যোদ্ধাদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
এদিকে এ বিবৃতির
প্রতিধ্বনি করে দামেশক সরকার মার্কিন পদক্ষেপকে বর্বর আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধ বলে
আখ্যায়িত করে।
রুশ ভাড়াটে সৈন্যদের
একজন কমান্ডারের মতে, রুশ
ভাড়াটে সৈন্য নিহত হওয়ার খবর পুতিনের জন্য সমস্যা। এই হামলায় নিহতদের সংখ্যা
রাশিয়া ২০১৫ সালে সিরিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করার পর সরকারীভাবে ঘোষিত নিহতের পাঁচগুণ। নাম
প্রকাশ না করে তিনি বলেন,
কয়েক ডজন আহত ভাড়াটে যোদ্ধা সেন্ট পিটার্সবার্গ ও মস্কোর
সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সিরিয়াতে আসাদপন্থী
বাহিনীর পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী ক্রেমলিনের
অর্থায়নকৃত একটি সংস্থার প্রধান আলেকজান্ডার লোনোভের মতে, সিরিয়ায়
নিহত ও আহত বহু রুশ ভাড়াটে সৈন্যই ইউক্রেনের যুদ্ধে জড়িত ছিল। এটা নিশ্চিত নয় যে, অর্থের
বিনিময়ে লড়াই করা এসব সৈন্যদের অর্থ কে দেয়, সরাসরি রাশিয়া, না
যুদ্ধে তার মিত্ররা সিরিয়া ও ইরান না তৃতীয় কোনো পক্ষ।
ব্লুমবার্গ হামলায় জড়িত
ভাড়াটে সৈন্যদের দলটিকে চিহ্নিত করেছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর
অনুযায়ী তারা বর্তমানে একাডেমি নামে পরিচিত সাবেক মার্কিন সামরিক কোম্পানি
ব্ল্যাকওয়াটারের পাল্টা রুশ ছায়া সংগঠন ওয়াগনারের সদস্য। কম দরে তেল বিক্রির
বিনিময়ে তাদের আসাদ বা তার মিত্ররা সিরিয়ার জ্বালানি স্থাপনা প্রহরায় নিয়োজিত করেছে।
মস্কোতে রাশিয়ান
ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ারস কাউন্সিল-এ মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ইউরি বরনিনের মতে, সিরিয়ায়
ষে পর্যন্ত একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সিরিয়া পুনর্গঠনে আসাদের পরিকল্পনায়
অর্থের যোগানদানের জন্য এক সময় ইসলামিক স্টেটের দখলাধীন থাকা দেইর আজজৌরর এ তেল
শোধনাগারটি গুরুত্বপূর্ণ।
এ হামলা বিষয়ে দেয়া এক
বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তেল শোধনাগারের উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদীদের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বদলে সিরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পদ দখলের জন্য অবৈধ উপস্থিতিকে
ব্যবহার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করা হয়।
সাবেক রুশ কূটনীতিক ও
আইনপ্রণেতা বর্তমানে মস্কোতে নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্লাদিমির
ফ্রলোভ বলেন, এ
সংঘর্ষ ভিয়তনাম যুদ্ধের পর প্রথম দু’ বিশ্বশক্তির মধ্যে প্রথম সংষর্ষ। তিনি বলেন এ
এক বড় কেলেংকারি এবং এক গুরুতর আন্তর্জাতিক সংকটের কারণ। কিন্তু রাশিয়া ভান করবে
যে কিছুই হয়নি। বস্তুত,
যদি বা কখনো সরকারীভাবে এসব মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয় তাহলে
তা পুটিনের জন্য রাজনৈতিক কেলেংকারিতে পরিণত হতে পারে। জনগণ দাবি জানাতে পারে যে
কেন সরকার এ মৃত্যুর খবর আড়াল করে রেখেছে। আগামী মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উদারপন্থী রাজনীতিক গ্রিগরি ইয়াভলিনস্কি সিরিয়ায় কতজন
রাশিয়ান নিহত হয়েছে এবং কি পরিস্থিতিতে হয়েছে তা রপ্রকাশ করতে পুটিনের প্রতি আহবান
জানিয়েছেন।
তার দল ইয়াব্লোকো
পার্টির প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যদি সেখানে ব্যাপক পরিমাণে রুশ নাগরিকরা
প্রাণ হারিয়ে থাকেন তাহলে আমাদের কমান্ডার ইন চিফ (পুটিন) সহ সংশ্লিষ্ট অফিসাররা এ
ব্যাপারে দেশবাসীকে জানাতে এবং এ দায়িত কার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য।
যদি রুশ যোদ্ধারা গোপন
পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়ে থাকেন যেমন মার্কিন সামরিক উপদেষ্টাদের
মৃত্যুর খবর গোপন রাখা হয়,
তাহলে এটা মস্কোর প্রকাশযোগ্য সর্বশেষ খবর হতে পারে।
বিজনেস ইনসাইডার
মঙ্গলবার জানায়, একটি
মার্কিন জঙ্গি বিমান সিরিয়ায় রুশ নির্মিত একটি টি-৭২ ট্যাংক ধ্বংস করেছে। পেন্টাগন
জানায়, শনিবার
আল তাবিয়েহর কাছে ট্যাংকটি ধ্বংস করা হয়। ফক্স নিউজ জানায়, ট্যাংকের
৩ ক্রু নিহত হয়েছেন। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আসাদ সরকারের সৈন্যরা ঐ
এলাকায় থাকা মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সৈন্যদের উপর গোলাবর্ষণ করার পর ট্যাংকটি ধ্বংস
করা হয় বলে পেন্টাগন জানিয়েছে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
জাতিগত বিদ্বেষ
0 facebook: