21 February 2018

নওমুসলিম হাদিয়া মুসলিম ই থাকতে চান যদিও তাতে উগ্রপন্থিদের আপত্তি



আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কেরালার উগ্রহিন্দুবাদীদের 'লাভ জিহাদ' মামলার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন হাদিয়া। তিনি মুসলিম এবং মুসলিমই থাকতে চান। হলফনামায় সুপ্রিম কোর্টে এমনই জানালেন হাদিয়া।

গত মে মাসে স্বামী শাফি জেহানের সাথে তার বিয়ে কেরালা হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়। এর পর থেকে হাদিয়া বারবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান, তাকে স্বামীর সাথে থাকার অনুমতি দেয়া হোক। কেরালা হাইকোর্ট দু'জনের বিয়েকে 'লাভ জিহাদের' উদাহরণ বলেছিল, হাদিয়ার বাবা তার বৈধ অভিভাবক বলেও জানিয়েছিল।

হলফনামাতে হাদিয়া সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন, তিনি শাফি জেহানের স্ত্রী থাকতে চান। শাফিকে বিয়ে করতেই হাদিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

কেরালা হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন হাদিয়া। সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয়।

এনআইএ তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে সর্বোচ্চ আদালতে জানায়, কেরালা একটা সংগঠিত চক্র মহিলাদের উগ্রবাদে আকৃষ্ট করে মগজ ধোলাই করছে আইসিসের হয়ে লড়তে পাঠানোর জন্য। এমন ৮৯টি ঘটনার খবর মিলেছে বলেও তারা জানায়। হাদিয়ার ব্যাপারটাও এমনই।

যদিও হাদিয়া হলফনামায় দাবি করেছেন, তার স্বামীকে অন্যায়ভাবে উগ্রবাদী বলে প্রচার করছে এনআইএ। স্বামীর সাথে আইএসের কোনো সম্পর্কই নেই।

হিন্দুত্ববাদীদের মুখে চপেটাঘাত, ভারতে নওমুসলিম হাদিয়ার জয়

আদালতের নির্দেশে বাবার ঘর থেকে স্বামীর ঘরে যেতে পারবেন হাদিয়া। ভারতের কেরালা রাজ্যে উগ্রহিন্দুবাদীদের ‘‌লাভ জিহাদ’‌ কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় পরিস্থিতিতে নওমুসলিম এখন তার মুসলিম স্বামীর সাথে সংসারজীবনে ফেরার লড়াইয়ে প্রথম ধাপে জয়ী হয়েছেন। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণ করেছেন হাদিয়া। তিনি আবারো জোরালো ভাষায় বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হিন্দুত্ববাদীর মুখে এটা ছিল প্রচণ্ড চপেটাঘাত।

হিন্দুত্ববাদীরা হাদিয়াকে আবার হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে নিতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। আদালত থেকে তারা সুবিধাও পেয়েছিল। ফলে ওই আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ধর্মান্তকরণ নিয়ে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয়।

১৬ সেপ্টেম্বর হাদিয়ার স্বামী শাফিন জাহান এনআইএ তদন্ত বন্ধের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান। তার যুক্তি, এনআইএ তদন্ত ‘‌ভালো দেখায় না।’‌ এরপরেই হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে যাওয়া কিশোরী হাদিয়ার মতামত শুনতে চায় সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার আদালতে হাদিয়া জানান, তিনি স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করেছেন। তিনি স্বামীর ঘরে ফিরতে চান। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র হাদিয়াকে প্রস্তাব দেন, রাষ্ট্রের খরচে তিনি শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারেন।

উত্তরে হোমিওপ্যাথির ছাত্রী হাদিয়া বলেন, ‘‌আমি শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে চাই। তবে তা রাষ্ট্রের খরচে নয়, আমার স্বামীই শিক্ষার ব্যয় বহন করবেন।’‌ তার সঙ্গে মতামত বিনিময়ের সময় বিচারপতিরা বলেন, তামিলনাড়ুর সালেমে শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারবেন তিনি। আদালত সালেমের হোমিওপ্যাথি কলেজের ডিনকে হাদিয়ার অভিভাবক নিয়োগ করেছে। কোনো সমস্যায় পড়লে তার কাছে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন হাদিয়া। কেরল পুলিশকেও হাদিয়ার নিরাপত্তা দিতে বলেছে আদালত। সালেম যেতে যাতে তার কোনো অসুবিধা না হয় তা পুলিশকে দেখতে হবে। হাদিয়া যাতে হোস্টেল পান এবং পুনরায় পড়া শুরু করতে পারেন তা কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে হবে বলে নির্দেশ আদালতের।

তিনি আগেও দাবি করেছিলেন, তিনি মুসলিম। নিজের ইচ্ছায় মুসলিম হয়েছেন। কেউ তাকে বাধ্য করেননি মুসলিম হতে। তিনি স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান।

ভারতের কোচি বিমানবন্দরে এ কথা বললেন হাদিয়া। যাকে ঘিরে ভারতীয় উগ্রবাদী হিন্দুদের লাভ জিহাদবিতর্কে আপাতত তোলপাড় কেরল, সেই হাদিয়া এ দিন গেলেন দিল্লিতে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তার মামলার শুনানি। আদালতে হাজিরার জন্যই কড়া পুলিশ পাহারায় দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয় হাদিয়াকে। সঙ্গে গেলেন তার মা, বাবাও। হাদিয়ার বক্তব্য শুনতে চায় শীর্ষ আদালত।

গত শুক্রবার হাদিয়ার স্বামী শাফিন জাহান অভিযোগ করেন, হাদিয়াকে এখন হিন্দু বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর শাফিনকে বিয়ে করার সময় হাদিয়ার বয়স ছিল ২৪। নামও ছিল আকিলা অশোকান।

তার পরই হাদিয়ার বাবা কেরল হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। তার অভিযোগ ছিল, জঙ্গিরাই চক্রান্ত করে তার কন্যা আকিলার (এখন হাদিয়া) ধর্মান্তকরণ ঘটিয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এখন তার তদন্ত করছে।

হাইকোর্ট হাদিয়ার বিয়ে বাতিলের নির্দেশ দেয়। যাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান হাদিয়ার স্বামী শাফিন। শীর্ষ আদালতে হাদিয়ার স্বামী জানান, বিয়ের দুবছর আগেই স্বেচ্ছায় মুসলিম হয়েছিলেন হাদিয়া। তাকে মুসলিম হতে কেউ বাধ্য করেননি। - ২৮ নভেম্বর, ২০১৮ প্রকাশিত সংবাদ)


শেয়ার করুন

0 facebook: