30 July 2019

সামান্য মোবাইলের জন্য বাল্যকালের মুসলিম বন্ধুকে হত্যা করতে হাত কাপেনি বৌদ্ধ তনয়ের

তনয় বড়ুয়া প্রকাশ ওরফে তনা
ডেস্ক রিপোর্ট।। ঋণ পরিশোধের টাকা জোগাড় করতে বাল্যকালের মুসলিম বন্ধু সাব্বির উদ্দিন ইকনের মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তনয় বড়ুয়া প্রকাশ ওরফে তনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাব্বির উদ্দিন ইকনকে নিয়ে ইয়াবা সেবনের জন্য নির্জন স্থানে গিয়ে গলাকেটে খুন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তনয় বড়ুয়া প্রকাশ তনা।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানায় তনয় বড়ুয়া প্রকাশ তনা।

তনয় বড়ুয়া প্রকাশ তনা আব্দুল্লাহপুর এলাকার বাবন বড়ুয়ার ছেলে। হত্যার শিকার সাব্বির উদ্দিন ইকন বিবিরহাট এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে।

বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক বিজন কুমার বড়ুয়া।

বিজন কুমার বড়ুয়া বলেন, তনয় তার দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন- তনয় বড়ুয়া প্রকাশ তনা ও সাব্বির উদ্দিন ইকন বাল্যকালের বন্ধু। সিএনজি অটোরিকশা চালক তনয় বড়ুয়া প্রকাশ তনা গত দেড় বছর যাবত ইয়াবায় আসক্ত হন। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেন। সিএনজি অটোরিকশা মালিকও দৈনিক ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা পাওয়া হন। এসব ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছিল বন্ধু ও সিএনজি অটোরিকশা মালিক।

তনয় উল্লেখ করেন- সাব্বির উদ্দিন ইকনের একটি টাচস্ক্রিন মোবাইল ছিল। সেই মোবাইলটি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তনয়। মোবাইলটি বিক্রি করে কিছু টাকা পেলে ঋণ শোধ করতে পারবেন এমন চিন্তা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুলাই ইকনকে অনেকবার কল দেন তনয়। সেদিন বিকেলে পাইন্দং হাইস্কুলের মাঠে ফুটবল ম্যাচ ছিল। খেলোয়াড়দের নিয়ে মাঠে যান তনয়। পরে সেখান থেকে ইকনকে নিয়ে নাজিরহাটে গ্যাস আনতে যান। সেখানে বার্থডে কেক কাটার কথা বলে ২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনেন তনয়। সেখান থেকে ২ নম্বর রোডে যান তারা।

তনয় মোবাইলে রিচার্জ করতে গেলে কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে যান ইকন। ইকনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন তনয়। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসেন ইকন। পরে দুইজনই সিএনজি অটোরিকশায় উঠে খাগড়াছড়ি রোডে নতুন মসজিদ এলাকায় যান। গাড়িটি বিজিবি ক্যাম্পের সামনে রেখে কারবালা টিলার নিচে আকাশি গাছের বাগানে বসেন ইয়াবা সেবন করার জন্য। এর মধ্যে ইকনের কাছ থেকে মোবাইলটি দেখার জন্য নিয়ে নেন তনয়। পরে ইকনের পেছন থেকে চুলের মুঠি ধরে গলায় ছুরি চালান তনয়। সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন ইকন। ফের ইকনকে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বুকের উপর বসে গলায় ছুরি চালান তনয়। এ সময় ইকনের মুখ চেপে ধরেন তনয়। পরে নিস্তেজ হয়ে গেলে ছুরিটি ফেলে দেন।

কেউ যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য সেদিন রাতে ধুরং খালে গোসল করে বাড়িতে চলে আসেন তনয়। রাতে ইকনের মা তনয়ের পিসি বাড়িতে এসে ইকন কোথায় জানতে চাইলে ২ নম্বর রোডে নামিয়ে দিয়েছিল তথ্য এই দেন তনয়। হত্যার পর ইকনের মোবাইল ফোনটি থেকে সিমকার্ড খুলে ফেলে দেন তনয়। পরে মোবাইল ফোনটি তনয়ের বিছানায় তোষকের নিচে লুকিয়ে রাখেন।

পরের দিন তনয়সহ ইকনের বাবা, চাচা মিলে ইকনের খোঁজে বের হন। ঘটনাস্থলে গিয়ে ইকনের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তনয়।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, তনয়ের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। পরে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। তনয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: