রোহিঙ্গা সমাবেশ। ফাইল ছবি |
জাতিগত বিদ্বেষ বলছি এ কারণে, এই খবরগুলো এমন যদি ১ জন দোষ করে তবে পুরো জাতিকে তার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে। বার বার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া আছে ভুল তথ্য, কিন্তু সেই ভুল শোধরানোর কোন উদ্যোগ নেই। এছাড়া অন্য পোর্টালের নিউজ কপি করে সেখানে ইচ্ছামত অংশ জুড়ে উস্কানিও দেয়া হচ্ছে। আসুন কালের কণ্ঠের গত ১ সপ্তাহে রোহিঙ্গা নিয়ে কিছু খবর দেখি-
১) মানবতায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই আজ ‘কালকেউটে’- https://bit.ly/32jrqpl
২) রোহিঙ্গাদের দোকানে শোভা পায় না বাংলাদেশের কোনো পণ্য- https://bit.ly/2ZuzPIo
৩) রোহিঙ্গা সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন, উদ্বেগ- https://bit.ly/2LiDyjc
৪) প্রিয়া সাহাদের সঙ্গী সেই মুহিবুল্লাহই রোহিঙ্গা সমাবেশের নেপথ্যে!- https://bit.ly/3467qbq
৫) রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার- https://bit.ly/2KYrAwi
৬) রোহিঙ্গা: লাভ সবার, ক্ষতি বাংলাদেশের- https://bit.ly/2NDxlRY
এই খবরগুলো মধ্যে অধিকাংশ খবর উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভূল তথ্য বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন-
ক) ৫ নম্বর খবর, মানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার নামে যে খবরটা করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক এবং ভুল তথ্য সম্পর্কিত তথ্যটি ফেসবুকে ডলার দিয়ে বুস্ট ছড়াচ্ছে কালের কণ্ঠ। যার কারণে ফেসবুকে দেখলাম খবরটির নিচে স্পন্সর দেখাচ্ছে।
অথচ এ খবরটি যে সম্পুর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তসূচক এবং নিড়ানীগুলো যে স্থানীয় কৃষকদের জন্য সেটার খবরও কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকায় এসেছে। কিন্তু সেই খবর স্থান পায়নি কালের কণ্ঠ পত্রিকায়। (এনজিও মুক্তি কক্সবাজারের “নিড়ানী”স্থানীয় কৃষকদের জন্য”
https://bit.ly/2Lac1Ay)
খ) ৪ নম্বর খবরে বলা হচ্ছে মুহিবুল্লাহ প্রিয়া সাহার সঙ্গী। অথচ এটা একটা ভুল তথ্য। ঐ সমাবেশটা প্রিয়া সাহার সমাবেশ ছিলো না, ছিলো মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু বা নির্যাতিতদের জন্য করা একটি সভা, যেটা বহু বছর ধরেই চলে আসতেছে। এই খবরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রিয়া সাহা আর মুহিবুল্লাহকে এক করা হয়েছে। অথচ প্রিয়া সাহা আর মুহিবুল্লাহ’র প্রতি ট্রাম্পের আচরণের ভিন্নতা ছিলো লক্ষ্যনীয়। প্রিয়া সাহা ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু গুম হয়েছে বলতে ট্রাম্প হাত এগিয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে, সৈণ্য পাঠাতে বলে। অপরদিকে মুহিবুল্লাহ যখন রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কথা বলে, তখন ট্রাম্প জিজ্ঞেস করে- রোহিঙ্গা এরা আবার কারা? বাংলাদেশ এটা কোথায়? (https://bit.ly/2PkS3IP)
তাই প্রিয়া সাহা আর মুহিবুল্লাহকে এক করা কখণই ঠিক হবে না। এবং ট্রাম্পের এই আচরণের ভিন্নতার মধ্যে রয়ে গেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশাল খেল।
গ) ৩ নম্বর খবরের প্রসঙ্গে বলতে হয়- রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কথা বলে সারা বিশ্বের বহু মানুষ প্ল্যাকার্ড ধরলো, এক হয়ে আন্দোলন করলো, তখন কোন সমস্যা হলো না। কিন্তু রোহিঙ্গারা যখন নিজেরা এক হলো, আর নিজেরা নিজেদের জন্য প্ল্যাকার্ড ধরলো কেন তখন একটি গোষ্ঠীর চুলকানি শুরু হয়ে গেলো?
আর রোহিঙ্গাদের এতদিন কোন নেতা ছিলো না, এ কারণে তাদের অনেক নির্যাতিত হতে হয়েছে। এখন যদি সত্যিই তাদের মধ্যে একজন নেতা তৈরী হয়, তবে এটা নিয়ে কাদের চুলকানি শুরু হলো, এটা আগে চিন্তা করতে হবে।
ঘ) এছাড়া কালেরকণ্ঠ ২৭ আগস্ট একটি খবর করেছে-
“বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অবলম্বনে: রাত নামলেই 'সশস্ত্র জঙ্গিদের' নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প!” (https://bit.ly/2Zvcz9e)
বিবিসি’র মূল খবরে হেডিং এ জঙ্গি শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি, কিন্তু কালেরকন্ঠ এডিট করে জঙ্গী শব্দটা যোগ করেছে। (https://bbc.in/328zed7)
আর খবরের ভেতরে কালেরকণ্ঠ বিবিসির নিউজটা হুবুহু কপি করেছে, কিন্তু শুরুতে নিজেরা একটা লাইন লাগিয়ে দিয়েছে- “খুব দ্রুতগতিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে।"
কালের কণ্ঠ পত্রিকার মালিক বসুন্ধরা গ্রুপ, যার মূল মালিক আহমেদ আকবর সোবহান। আহমেদ আকবর সোবহানকে গত ৪ মাসে ভারত ২ বার পুরস্কৃত করলো-
--কলকাতায় আহমেদ আকবর সোবহানকে সম্মাননা- (https://bit.ly/2Zw145y)
--দিল্লিতে ‘এস্টেট অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান- (https://bit.ly/2ZiIP4i)
--এছাড়া ভারতীয় হাইকমিশনারকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ, যা অন্য কোন বিজনেস গ্রুপ দিয়েছে বলে জানা নাই- (https://bit.ly/2Hujhq0)
আসলে রোহিঙ্গা সমস্যাটা একটি বহুমুখী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। রোহিঙ্গারা নিজেরাই ভিকটিম। খেলোয়াররা হচ্ছে বড় বড় সম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলো। আমরা জনগণ তাহলে কার পক্ষ নেবো, সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন- “রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গেলে ভালো হবে।”
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, ‘জনগণের ব্লকের জন্য এটা ভুল সিদ্ধান্ত’। ভিকটিম মাত্রই দুর্বল, দুর্বলের বিরোধীতা সবাই করতে পারে। কিন্তু মূল খেলোয়ারদের বিরোধীতা কেউ করতে পারে না। রোহিঙ্গাদের বিরোধীতার মধ্যে কোন ক্রেডিট নাই, কিন্তু আড়ালে থাকা মূল খেলোয়ারদের বিরোধীতার মধ্যে ক্রেডিট আছে। তাছাড়া মূল খেলোয়ারদের না বুঝে, যদি আমরা ভিকটিমের বিরোধীতা করি, তবে তার রেজাল্ট কোন না কোনভাবে মূল খেলোয়ারের পক্ষেই যাবে। এমনও হতে পারে যার পরবর্তী রেজাল্টের ক্ষতি আমাদের ঘাড়েও আসতে পারে। তাই এই বিষয়ে ডিসিশন নিতে হবে খুব সাবধানে।
রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক বিষয়ে মূল মূল প্লেয়ার কে কে ?
১) মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক ব্লক
২) মার্কিন রিপাবলিকান ব্লক
৩) চীন
ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের মধ্যে আছে এনজিও, বিদেশী দাতা গোষ্ঠী, সাহায্য সংস্থা, বেশিরভাগ মিডিয়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। মজার ব্যাপার হচ্ছে- মিডিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের বড় নিয়ন্ত্রণে থাকায় অধিকাংশ ঘটনায় তারা মার্কিন সম্রাজ্যবাদকে আড়াল করে খবর করে, এতে জনগণ তাদের সম্পর্কে বুঝতে পারে না। যেমন- বাংলাদেশের রিপাবালিকান সদস্যদের তারা ভারতীয় হিসেবে ট্যাগ দেয়, আর মায়ানমারে রিপাবলিকান সদস্যদের চীন হিসেবে ট্যাগ দেয়। আর নিজেরা (ডেমোক্র্যাটরা) সাজে নিরপেক্ষ, মানবতাবাদী। নিজেরা ঝামেলা করে দোষ চাপিয়ে দেয় অন্যের ঘাড়ে।
মার্কিন রিপাবলিকান ব্লকের মধ্যে আছে, ট্রাম্প, মোদি, সুকি সরকার, সুকির সেনা বাহিনীর একটা শক্তিশালী অংশ, ভারতীয় উগ্র বিজেপি, শ্রীলংকার উগ্র বৌদ্ধবাদী বধু বালা সেনা, মায়ানমারের উগ্র বৌদ্ধবাদী ৯৬৯ মুভমেন্ট। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কালের কণ্ঠের আচরণ রিপাবলিকান ঘরোনার মনে হচ্ছে।
চীনের এ অঞ্চলে পুরো স্বার্থই ব্যবসায়ীক স্বার্থ। আলাদা কোন রাজনৈতিক দর্শনও চীনের পাইনি। তারা ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারের জন্য টাকা পয়সা ইনভেস্ট করতেই বেশি আগ্রহী। তবে এজন্য তারা স্থিতিশীল পরিবেশ চায়। স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে তারা টাকা ইনভেস্ট বাড়িয়ে দিতেও প্রস্তুত।
(চলবে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃষ্টিকোন থেকে রোহিঙ্গাদের মূল ঘটনা নিয়ে লেখা হবে, অস্থির না হয়ে ধৈর্য্য্ ধরে অপেক্ষায় থাকুন)
খবর বিভাগঃ
নয়ন চ্যাটার্জি
মতামত
রোহিঙ্গা
0 facebook: