11 January 2019

ভারতের প্রাণকেন্দ্রে প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান শাহাবুদ্দীন ঘোরী

ছবিঃ সংগৃহিত
হাসান মুহম্মদঃ ভারতের প্রাণকেন্দ্র দিল্লি-আজমীরে রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বপ্রথম যিনি ইসলামী রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেন তিনি সুলতান শাহাবুদ্দীন ঘোরীহিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজ তার তিন লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী ও বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেও সুলতান শাহাবুদ্দীন ঘোরীর বারো হাজার সৈন্যের ক্ষুদ্র বাহিনীর নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেপৃথ্বীরাজের সাথে তিনহাজার জঙ্গি হাতি ছাড়াও দেড়শ’-দুদেশীয় রাজা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিল

সুলতান শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী প্রথম ভারতবর্ষ বিজয়ী মুসলিম শাসকতিনি এখানে মুসলিম শাসনের ভিত্তিস্থাপন করেনতিনি বর্ণবাদ প্রথার বদলে এখানে ইসলামী আদর্শের সাম্য ও মৈত্রির ভিত্তিতে একটি শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম করেনভারতবর্ষের সব রাজ্য মিলেমিশে তাদের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুলতান ঘোরীর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয় কিন্তু যেসব রাজাদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ হয়এই চক্রান্ত মোকাবিলার সংগ্রামে বহু মুসলমান রক্ত ঢেলে দেয় এই মাটিতেতাদের রক্তে ভারতবর্ষে রচিত হয়েছে মুক্তি ও সংগ্রামের নতুন ইতিহাস

মোহাম্মদ ইবনে কাসেম প্রথম মুসলিম সিপাহসালার যিনি হিন্দুস্থানে প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেনকিন্তু এই রাষ্ট্র বিশাল ভারতের কেবলমাত্র একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিলমাহমুদ গজনবী তীব্র বায়ুবেগে এসে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ঘুরে দেখেন, কিন্তু পাঞ্জাব ব্যতীত অন্য কোনো এলাকা তার সাম্রাজ্যের অন্তভূক্ত করেননিআরও যে বীর সেনানী হিন্দুস্তানের মূল ভূখন্ডে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন এবং সমগ্র মহাদেশে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন তিনি ছিলেন শাহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী

ঘোরের পার্বত্য রাজ্যটি হিরাতের দক্ষিণ-পূর্বে এবং গজনীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ছিলরাজ্যটি সুলতান মাহমুদ জয় করে তার সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত করেনগজনী শাসকদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় গিয়াসুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরের শাসনকর্তা হয়ে যানতখন ফিরুজকুহ ছিল ঘোরের সদর১১৬৫ খ্রিষ্টাব্দে খসরু শাহাকে গজনী থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং ১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শাহাবুদ্দীনকে গজনীর শাসনভার অর্পণ করেনগিয়াসুদ্দিন মোহাম্মদ তাঁর ভ্রাতাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেনশাহাবুদ্দীনও সারাজীবন তার বড় ভাইয়ের ভক্ত-অনুগত ছিলেনগিয়াসুদ্দীনের পর ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুলতান হনইনিই ভারতে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তিস্থাপন করেন

এ সময় দিল্লি ও আজমীরে হিন্দুরাজ্যগুলো একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী সম্মিলিত রাষ্টে পরিণত হয়েছিলতাঁর শাসনকর্তা পৃথ্বিরাজ গজনী সাম্রাজ্যের কতিপয় সীমান্ত এলাকা অধিকার করে নিয়েছিলেনশাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী ঐসব দখলীকৃত এলাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানালে পৃথ্বীরাজের সাথে যুদ্ধের সূচনা হয়

ইতিপূর্বেই অর্থাৎ ১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দে শাহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী পাঞ্জাবের সর্বশেষ গজনী শাসনকর্তা খসরু মালিকের কাছ থেকে পেশোয়ার অধিকার করেনলাহোরে খসরু মালিক তাঁর অনুগত্য স্বীকার করেনঅত:পর শাহাবুদ্দীন ঘোরী শিয়ালকোটে চলে যান সেখানের দুর্গ পুন:নির্মাণ করেন এবং তথাকার একজন অফিসারকে সেনাপতি নিযুক্ত করে তিনি গজনীয় প্রত্যাবর্তন করেনএই সুযোগে খসরু মালিক তাঁর হারানো সিংহাসন পুনরুদ্ধারে সচেষ্ঠ হয়ে ওঠেন

শাহাবুদ্দীন ঘোরী ১১৮২ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ধুর প্রসিদ্ধ বন্দরগাহ ডাবিল অধিকার করেনএকই সাথে তিনি উপকলবর্তী বহু এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেনঅত:পর তিনি পুনরায় পাঞ্জাবে আগমন করেন এবং লাহোর অধিকার করেনখসরু মালিক কে গ্রেফতার করত: ফিরুজকুহে প্রেরণ করেনতাঁর ইচ্ছা ছিল গজনী সাম্রাজের অন্তভূক্ত সারহিন্দ ও থানেশ্বর রাজপুতদের থেকে মুক্ত করা

লাহোর বিজয়ের মধ্যে দিয়ে সুলতান শাহাবুদ্দীন ঘোরী ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের যে সূচনা করে তার পরবর্তী বিজয় অভিযানগুলো এই ধারাকে আরও বিস্তুৃত করেছিলতাই সুলতান শাহাবুদ্দীন ঘোরীর লাহের বিজয় এই উপমহাদেশে ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায় রূপে গণ্য হয়ে থাকে


শেয়ার করুন

0 facebook: